দশম সর্গঃ
মুগ্ধ-মাধব
অত্রান্তরে মসৃণরোষবশামসীম-নিঃশ্বাসনিঃসহমুখীং সুমুখীমুপেত্য |
সব্রীড়মীক্ষিতসখীবদনাং প্রদোষে সানন্দগদগদপদং হরিরিত্যুবাচ ||১||
গীতম্ ১৯
দেশবরাড়ীরাগাষ্টতালাভ্যং গীয়তে
বদসি যদি কিঞ্চিদপি দন্তরুচিকৌমুদী হরতি দরতিমিরমতিঘোরম্ |
স্ফুরধরসীধবে তব বদনচন্দ্রমা রোচয়তি লোচন-চকোরম্ ||
প্রিয়ে চারুশীলে মুঞ্চ ময়ি মানমনিদানম্ |
সপদি মদনানলো দহতি মম মানসম্ দেহি মুখকমলমধুপানম্ ||১|| ধ্রুবম্ ||
সত্যমেবাসি যদি সুদতি ময়ি কোপিনী দেহি খরনয়নশরঘাতম্ |
ঘটয় ভুজবন্ধনং জনয় রদখণ্ডনম্ যেন বা ভবতি সুখজাতম্ ||২||
ত্বমসি মম ভূষণং ত্বমসি মম জীবনম্ ত্বমসি মম জলধিরত্নম্ |
ভবতু ভবতীহ ময়ি সততমনুরোধিনী তত্র মম হৃদয়মতিযত্নম্ ||৩||
নীলনলিনাভমপি তন্বি তব লোচনম্ ধারয়তি কোকনদরূপম্ |
কুসুমশর-বাণ-ভাবেন যদি রঞ্জয়সি কৃষ্ণমিদমেতদনুরূপম্ ||৪||
স্ফুরতু কুচকুম্ভয়োরুপরি মণিমঞ্জরী রঞ্জয়তু তব হৃদয়দেশম্ |
রসতু রসনাপি তব ঘনজঘনমণ্ডলে ঘোষয়তু মন্মথনিদেশম্ ||৫||
স্থলকমলগঞ্জনং মম হৃদয়রঞ্জনম্ জনিত-রতি-রঙ্গ-পরভাগম্ |
ভণ মসৃণ-বাণি করবাণি চরণদ্বয়ং সরস-লসদলক্তকরাগম্ ||৬||
স্মর-গরল-খণ্ডনং মম শিরসিমণ্ডনম্ দেহি পদপল্লবমুদারম্ |
জ্বলতি ময়ি দারুণো মদনকদনানলো হরতু তদুপাহিতবিকারম্ ||৭||
ইতি চটুল-চাটু-পটু-চারু মুবৈরিণো রাধিকামধি বচনজাতম্ |
জয়তি পদ্মাবতী-রমণ-জয়দেবকবি-ভারতী-ভণিতমতিশাতম্ ||৮||
পরিহর কৃতাতঙ্কে শঙ্কাং ত্বয়া সততং ঘনস্তন-
জঘনয়াক্রান্তে স্বাস্তে পরানবকাশিনি |
বিশতি বিতনোরন্যো ধন্যা ন কোহপি মমান্তরং
প্রণয়িনি পরীরম্ভারম্ভে বিধেহি বিধেয়তাম্ ||১||
মুগ্ধে বিধেহি ময়ি নিদয়দন্তদংশদোবল্লিবন্ধ-নিবিড়-স্তনপীড়নানি |
চণ্ডি ত্বমেব মুদমঞ্চ ন পঞ্চবাণ চণ্ডালকাণ্ড-দলনাদসবঃ প্রয়ান্তি ||২||
শশিমুখি তব ভাতি ভঙ্গুর-ভ্রূ-যুবজনমোহ-করাল-কালসর্পী |
তদুদিত-ভয়ভঞ্জনায় যূনাম্ ত্বদধর-সীধু-সুধৈব সিদ্ধমন্ত্রঃ ||৩||
ব্যথয়তি বৃথা মৌনং তন্বি প্রপঞ্চয় পঞ্চমং
তরুণি মধুরালাপৈস্তাপং বিনোদয় দৃষ্টিভিঃ |
সুমুখি বিমুখিভাবং তাবদ্বিমুঞ্চ ন মুঞ্চ মাং
স্বয়মতিশয়-স্নিগ্ধো মুগ্ধে প্রিয়োহয়মুপস্থিতঃ ||৪||
বন্ধুকদ্যতিবান্ধবোহয়মধরঃ স্নিগ্ধো মধুকচ্ছবি-
র্গণ্ডে চণ্ডি চকাস্তি নীলনলিনশ্রীমোচনং লোচনম্ |
নাসাভ্যেতি তিলপ্রসুন-পদবীং কুন্দাভদন্তি প্রিয়ে
প্রায়স্ত্বন্মুখসেবয়া বিজয়তে বিশ্বং স পুষ্পায়ুধঃ ||৫||
দৃশোতব মদালসে বদনমিন্দুসন্দীপনম্
গতির্জনমনোরমা বিজিতরম্ভমুরুদ্বয়ম্ |
রতিস্তব কলাবতী রুচিরচিত্রলেখে ভ্রুবা-
বহো বিবুধ-যৌবতং বহসি তন্বি পৃথ্বীগতা ||৬||
প্রীতিং বস্তনুতাং হরিঃ কুবলয়াপীড়েন সার্দ্ধং রণে
রাধাপীনপয়োধরস্মরণকৃত্কুম্ভেন সম্ভেববান |
যত্র স্বিদ্যতি মীলতি ক্ষণমথ ক্ষিপ্তে দ্বিপে তত্ক্ষণাৎ
কংসস্যালমভুজ্জিতং জিতমিতি ব্যামোহকোলাহলঃ ||৭||
ইতি শ্রীগীতগোবিন্দে মহাকাব্যে মানিনীবর্ণনে মুগ্ধমাধবো নাম দশমঃ সর্গঃ।
জয়দেবের গীতগোবিন্দ (দ্বাদশ শতক) দশম সর্গ মুগ্ধ মাধব
|
দশম সর্গ
বা মুগ্ধ-মাধব
তারপরে যবে রোষ কিছু উপশমিত
( যদিও বদন ম্লান, নিশ্বাসে মথিত, )
তুষিতে রাধাকে হরি আসিলেন সাঁঝে গো |
সখী-মুখপানে রাধা চাহিলেন লাজে গো |
সানন্দে গদ্ গদস্বরে, হরি অতি প্রেমভরে,
রাধা-পদে সবিনয়ে কত ক্ষমা যাচে গো | ১
উনবিংশ গীতি
( দেশবরাড়ী রাগ, অষ্টতাল )
যদি গো কথা কহ শ্রীরাধে !*
. দশনে ঝলি’ কৌমুদী,
হরিবে মোর তিমির ঘোর, ললনে !
চকোর সম লুব্ধ মম
. নয়ন দুটি নিরবধি,
অধর-সীধু যাচিছে বিধুবদনে !
ধুয়া ---- ওগো ও প্রিয়ে, সুচারুশীলে !
. ত্যজ এ বৃথা মান |
. মদনানলে মানস জ্বলে,
. দেহ গো মুখ কমল দলে
. করিতে মধুপান ! ১
সত্য যদি ওগো সুদতি,
. কোপিনী তুমি এ জনে,
এখনি খর নয়ন-শর হান গো !
ভুজের বাঁধে, বাঁধ গো রাধে,
. আঘাত কর দশনে ;
ঘুচিবে দুখ, লভিবে সুখ প্রাণ গো | ২
অঙ্গে মম ভূষণ তুমি,
. জীবন তুমি আমার-ই,
ভব-জলধি মাঝারে নিধি রত্ন ;
রাধে গো ! নিতি লভিতে প্রীতি
. ভুবন মাঝে তোমার-ই,
সতত করি হৃদয় ভরি যত্ন | ৩
নীল-নলিনী তুল্য তব
. নয়ন-যুগ, লোহিত গো !
রক্ত-দল পদ্ম হ’ল ললনা |
যদিগো ওহে, সে সরোরুহে
. কৃষ্ণে কর মোহিত গো,
সফল হবে কমলে তবে তুলনা | ৪
দোলাও কুচ-কুম্ভে আজি
. মণি-খচিত মঞ্জরী
রঞ্জি’ তব বক্ষে নব সুষমা ;
মেখলা গাছি জঘনে বাজি’
. উঠুক ঘন গুঞ্জরি,
মদনাদেশ করি বিশেষ ঘোষণা | ৫
স্থল-কমল বিজয়ী তব
. চরণে, ওগো ললনে,
আদেশ কর বুকের পরে রাখিব
জাগাতে রতি- রঙ্গে মতি,
. আমি গো অতি যতনে---
আপনা হাতে আলতা তাতে মাখিব | ৬
স্মর-গরল খণ্ডিয়া---
এ শির মম মণ্ডিয়া
প্রসার রাধে, উদার পদ-পল্লবে |
মদনে যেন অনল জ্বালা,
এখন তাহে নিভাও বালা
. করগো আজি শীতল তব বল্লভে |৭*
চটুল-চাটু বচনে পটু
. মুরারি,--- করি আরতি,
মধুরে ভাষি’ তুষিল আসি রাধিকায় |
পদ্মাবতী পতি সুমতি
. জয়দেবের ভারতী,
নিখিল ভব দীপিবে নব প্রতিভায় | ৮
শঙ্কা কেন গো মিছে কর প্রেম-ভঙ্গে ?
তুমি ছাড়া প্রাণ-মাঝে, একেলা মদন আছে ;
করি না বসতি আমি আর কারো সঙ্গে |
দাও অনুমতি, বাঁধি তব-তনু অঙ্গে | ১
নির্দ্দয় হয়ে মোরে দংশ গো দন্তে ;
বুকে কর নিপীড়ন, বাঁধ ভুজবন্ধে |
শাসন করিয়া মোরে সুখী হও হরষে |
চণ্ডাল কাম যে গো খরশর বরষে | ২
নাগিনীর মত ওই ভ্রূভঙ্গি হেরিয়া,
ওগো ও কেপিনী ! আমি উঠিতেছি ডরিয়া ;
মন্ত্র-ওষধি তব অধরের সীধু রে !
প্রদানি তা আশ্বাস দেহ ভয়-বিধুরে | ৩
ব্যথা লাগে ; কথা কও সুমধুর পঞ্চমে |
অভিমান ভুলে যাও ; মোর মুখপানে চাও ;
এসেছি কাতর চিতে অভিমান-ভঞ্জনে | ৪
অনঙ্গ ভূবনজয়ী, তব মুখ-সেবনে ;
মদন-আয়ূধ যত তব মুখে নয়নে |
কপোল মধূক ফুল, বন্ধক অধরে,
কুন্দের কলি দাঁতে নাসে তিল ফুল ভাতে,
নয়ন শোভিছে নীল নলিনীর মত রে | ৫
ইন্দু-সন্দীপনী বদনের শোভা ;
. মদালসা তুমি নয়নে |
রম্ভার মত উরু মনোলোভা ;
. মনোরমা তুমি গমনে |
রতি কলাবতী! ভ্রূযুগলে নব
. সুচারু চিত্র লেখা গো!
মরত-বাসিনী! অঙ্গেতে তব
. সুরনারী যায় দেখা | ৬*
কুবলাপীড়ে# রণে বধিতে পড়িল মনে
. বাধা-কুচ-কুম্ভ তাই বিলম্ব হরির
হইল নিধনে তার; অঙ্গে বহে স্বেদ-ধার,
. নিমীলিত হল আঁখি পরে সে করীর |
সংহার করিলে পরে, কংস-পক্ষ দুঃখ-ভরে
. করেছিল কোলাহল আনন্দিত হরি |
সেই সদানন্দ-চিত্ত, ভক্তজন প্রাণ নিত্য
. দিবেন করুণা করি ভক্তি প্রীতি ভরি | ৭
ইতি মানিনী বর্ণনে মুগ্ধমাধব নামক দশম সর্গ সমাপ্ত।
<< প্রতি শ্লোকের প্রথম লাইনকে এক লাইন ভাবতে হবে। পড়িবার সুবিধার জন্য ভাগ করিয়া দূরে দূরে বসাইয়াছি। অন্য ভাঙ্গা লাইনে মিল আছে। . বিজয়চন্দ্র মজুমদার
|
<< সপ্তম শ্লোকটি আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন ছন্দে রচিত মনে হইতে পারে ; কিন্তু ক্রন্দন সুরটি ঠিক বজায় আছে। . বিজয়চন্দ্র মজুমদার
|
<< সর্গভঙ্গের পঞ্চম শ্লোকে যে সকল ফুলের নাম আছে, ঐগুলি পঞ্চশরের পুষ্প নহে। জয়দেব যেমন কবি ছিলেন, তেমনি পণ্ডিত ও আলঙ্কারিক ছিলেন। তিনি কদাচ এ ভুল করেন নাই। পঞ্চশর যথাঃ--- অরবিন্দ, মশোকঞ্চ, চূতঞ্চ, নবমল্লিকা ; রক্তোত্পলঞ্চ পঞ্চৈতে পঞ্চবাণস্য সায়কাঃ। সর্গভঙ্গের শ্লোকগুলি সম্বন্ধে আমার সন্দেহের কথা প্রথমেই বলিয়াছি। . বিজয়চন্দ্র মজুমদার
|
<< ইন্দুসন্দীপনী, মদালসা, রম্ভা, মনোরমা, কলাবতী ও চিত্রলেখা, সুর-যুবতীদের নাম। . বিজয়চন্দ্র মজুমদার
|
# কুবলয়াপীড় --- হাতীর নাম . বিজয়চন্দ্র মজুমদার
|
কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ ও কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের বঙ্গানুবাদ
|
কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের বঙ্গানুবাদ (আশ্বিন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ, অক্টোবর ১৯২৫) সাদা পটে, ছোট হরফে, অনুবাদের সঙ্গে কবির দেওয়া বিভিন্ন টীকা-টিপ্পনী . . .
|
এই সেই বিখ্যাত শ্লোক্ যা নিয়ে বলা হয়ে যে ভক্তবত্সল শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের মর্মব্যথা বুঝতে পেরে নিজের হাতেই লিখে গিয়েছিলেন সেই কথা যে কথা লিখতে ভক্তের (জয়দেব) অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠেছিল। এই পদটিই গীতগোবিন্দের দশম সর্গের নবম পদ। এখানে পদের ক্রমিক সংখ্যা, অনুবাদক কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের পদের ক্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে।
|