কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১  
মনসার জন্ম পালা     
.
১. ওলো শুন আদ্যের কাহিনী   
২. আইলা মনসা দেবী না করি বিচার    
৩. বন্দিলাম বন্দিলাম মাগো যন্ত্রে দিয়া ঘা  
৪. শ্রাবণ মাসের রবিবারে মনসা পঞ্চমী  
৫. পূর্বে বারানসী রাজা ছিল দিবদাস  
৬. দেখিয়া পুষ্পের বনে আনন্দিত ত্রিলোচন  
৭. পাতালেতে মনসা জন্মিল শুভদিনে  
৮. কহ কহ সুবদনি সাচে তুমি কোন জনি  
৯. কামভাবে মহাদেব বলে অনুচিত     
১০. শিবের চরণ ধরি স্তুতি করে বিষহরী  
১১. পুষ্প বনে মহাদেব ভ্রমে কুতূহল  
১২. ভাল ভান্ডিলা শিব পলাইয়া গেলা দূর    
১৩. সই স্বরূপে কহিবা মোর ঝাটে      
১৪. মনে মনে ভাবে দেবী কি হবে উপায়      
১৫. ডোমনী আয় নারী আয় আয় আয়    
১৬. তুমি শিব ত্রিলোচন না বুঝি তোমার মন   
১৭. কার্য বুঝিয়া দেবী চিন্তে মনে মনে     

গৌরী কোন্দল পালা     

মনসা বিবাহ পালা     

অষ্ট নাগের জন্ম পালা   

অমৃত মথন পালা   

বনবাস পালা       

হাসন হুসন যুদ্ধ পালা     

গুয়াবাড়ি কাটা পালা       

ধন্বন্তরি বধ পালা     
১০
ছয় কুমার বধ পালা     
১১
ঝালুবাড়ির পূজা পালা  
১২
যমযুদ্ধ পালা      
১৩
যাত্রাপাটন পাটন পালা     
১৪
বস্তুবদল পালা     
১৫
ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা
১৬
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা    
১৭
লোহার বাসর ঘর নির্মাণ পালা     
১৮
লখিন্দর বিবাহ পালা       
১৯
লখিন্দর দংশন পালা   
২০
ভাসান পালা      
২১
স্বর্গারোহণ পালা     
যন্ত্র পড়ে থাকে যদি লক্ষ জনার মাঝে |       
যান্ত্রিক না হলে যন্ত্র কেমন করে বাজে ||
আমি বটে যন্ত্র মাগো যন্ত্রী বটে তুমি  |        
যা বলে বাজাও যন্ত্র তা বলিব আমি ||
জনক জননী বন্দম শিরের ভূষণ |            
যাহার প্রসাদে দেখি এ তিন ভুবন ||
তাল যন্ত্রে বন্দি আর মন্দিরার ঘা |            
কশ্যপ কদ্রূপ বন্দি নাগের বাপ্ মা  ||
সকল বন্দিলাম ভাই কি বলিব শেষ |        
শিরে বন্দম গুরু যে করেছে উপদেশ ||
গুরুর চরণ ভাবি যেই নরে গায়  |           
সরস্বতী মাতা তার পয়ার যোগায় ||
একে একে বন্দিলাম যত দেব গণ |         
ময়ূর বাহনে বন্দম দেব ষড়ানন ||
পুবে বন্দিয়া গাই দেব দিবাকর |             
পশ্চিমে বন্দিয়া গাই দেব শশধর ||
হিমালয় পর্বত মাগো বন্দিলাম উত্তরে  |   
যবদ্বীপ বেড়িয়াছে লবণ সাগরে ||
চারিদিকে বন্দিলাম মাগো কি বন্দিব আর |
আমি দেখিয়া দয়া কর একবার ||
গাইন বন্দম বাইন বন্দম সঙ্গের পঞ্চ ভাই |
ঘটে অধিষ্ঠান কর বিষহরি আই ||
ছাড়িলাম বন্দনা ভাই গীতে দাও মন |      
স্বপ্ন অধ্যায় পালা বলি শুন সর্বজন ||
রাম ভাব রাম চিন্ত রাম কর সার |         
মনসার চরণ বিনা গতি নাহি আর ||
বৈদ্য বিজয়গুপ্তের মধুর ভারতী   |         
সর্বক্ষণ রক্ষা যারে করেন পদ্মাবতী  ||

.       ****************                                                        
সূচি...    


মিলনসাগর
কহিলাম সকল কথা যে জানি বৃত্তান্ত  |      
গীত নহে এ জানিও মনসার মন্ত্র ||
যথাগীত শুনি আমি তোমার রচিত |        
সত্য করি কহি তথা যাইব নিশ্চিত ||
মোর গীত শুনি যার হৃদয় কৌতুক |        
মোর বরে হবে তার মহাধন সুখ ||
অহঙ্কারে মোর গীত করে উপহাস  |        
মোর কোপে হইবে তার সবংশে বিনাশ ||
যাহার ঘরে গায় গীত আমার স্তবন |       
পাতিয়া বিচিত্র ঘট উত্তম আসন ||
জয় জয় হুলাহুলি দিয়া বলিদান |        
মোর বরে হবে তার সর্বত্র কল্যাণ ||
অপুত্রার পুত্র হবে নির্ধনের ধন |         
রোগীর রোগ দূর হয় বন্দী বিমোচন ||
নারী যার ঘরে নাই নারী হয় ঘরে |      
মনের অভীষ্ট সিদ্ধ হয় মোর বরে ||
হেনমতে স্বপ্ন কথা কহিয়া উপদেশ |      
নাগরথে চড়ি গেল আপনার দেশ ||
স্বপ্ন দেখিয়া বিজয় গুপ্তের দূরে গেল নিদ |  
হরি হরি নারায়ণ স্মরয়ে গোবিন্দ ||
প্রভাত সময়ে প্রকাশ দশদিশা |           
স্নান করি বিজয় গুপ্ত পূজিল মনসা ||
হরি নারায়ণ ভাবি নির্মল করে চিত |   
রচিতে আরম্ভ করে মনসার গীত ||
যেনমতে পদ্মাবতী করিয়া সন্নিধান  |    
তেনমতে করে বিজয় গীতের নির্মাণ ||
ঋতু শূন্য বেদ শশী পরিমিত শক  |     
সুলতান হোসেন শা নৃপতি তিলক ||
সংগ্রামে অর্জুন রাজা প্রভাতের রবি |   
নিজ বাহুবলে রাজা শাসিল পৃথিবী ||
রাজার পালনে প্রজা সুখ ভুজে নিত |   
মুল্লুক ফতেয়াবাদ বাঙ্গজোড়া তকসিম ||
পশ্চিমে ঘাগর নদী পূর্বে গন্ডেশ্বর  |     
মধ্যে ফুল্লশ্রী গ্রাম পন্ডিত নগর ||
চারি বেদধারী তথা ব্রাহ্মণ সকল  |     
বৈদ্যজাত বসে নিজ শাস্ত্রেতে কুশল ||
কায়স্থজাতি বসে তথা লিখনের সুর |
অন্য জাতি বসে নিজ শাস্ত্রে সুচতুর ||
স্থান গুণে যেই জন্মে সেই গুণময় |    
হেন ফুল্লশ্রী গ্রামে বসিত বিজয়  ||
গাইন লইয়া তাল ধরে জন্ম নানাজাতি ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন গীতে দাও মতি ||
যোড় হাতে সভাকারে করে পরিহার |   
গীতের যতেক দোষ ক্ষমিবা আমার  ||
স্বভাবে পাঁচালী গীত নানা দোষময় |     
না লবে গীতের দোষ পন্ডিত যেবা হয় ||
বিজয় গুপ্ত বলে হও সাবহিত |         
পয়ার এড়িয়া বল লাচারীর গীত ||
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |       
স্বপ্নাধ্যায় পালা গাই এইখানে সোসর ||

.       ****************                                                        
সূচি...    


মিলনসাগর
*
আজু কেন তোমার মন না বুঝি গোসাঞি |   
মোর ঘর হইতে বুঝি যাবা অন্য ধাই ||
কার্যের গৌরবে যদি যাও দৈবগতি |         
যথা যাও তথা মুই যাইব সঙ্গতি ||
এতেক বলিয়া দেবী শুইলা কুতূহলে |       
দৃঢ় মুষ্টি ধরিলেক শিবের আঁচলে ||
আঁচলে আঁচলে গ্রন্থী বাঁধিয়া নির্যাস  |          
হরিষ মনে শুইলা দেবী শিবের বামপাশ ||
চন্ডিকার কথায় শিবের মনে লাগে ব্যথা |    
কপট প্রবন্ধে কিছু কহিতে লাগে কথা ||
কথার রসে দেবীর মাতিয়া গেল মন |          
এক সিংহাসনে দোহে করেন শয়ন ||
চিত্তে সুখ নাহি গোসাঞি যাবে পুষ্পবাড়ী |  
মিছামিছি নিদ্রা যায় ঘনশ্বাস ছাড়ি ||
নিদ্রায় ভুলিল মন জানিল নিশ্চয় |           
হরিষ মনে শুইল দেবী খন্ডিল বিস্ময় ||
একেশ্বর যাবে দেবীর শান্তি নাহি চিতে  |     
জাগিতে জাগিতে নিদ্রা আসিল আচম্বিতে ||
মাথা তুলিয়া শিব চাহে ঘন ঘন |             
নিশ্চয় জানিল দেবীর নিদ্রার লক্ষণ ||
নাসিকার শ্বাস দেবীর বহে ঘড় ঘড় |             
চন্ডীরে নিদ্রালি দিয়া বাহিরে গেলা হর ||
হাতসানে কহে কথা না করে শবদ |             
নন্দীরে আদেশ করেন সাজারে বলদ ||
শিবের আদেশ নন্দী মস্তকেতে বন্দি |          
আথেব্যাথে বৃষরথ সাজাইল নন্দী ||
ঐরাবত হস্তী যেন বৃষের শরীর |                  
সুবর্ণের খুর দিল খুরের বাহির ||
পৃষ্ঠেতে বান্ধিল রম্য পাটের বসন |          
গলায় বান্ধিল ঘন্টা বাজে ঢন ঢন ||
বুকে পৃষ্ঠে চারি পাশে বান্ধিল ঘাঘর |            
লেজেতে বান্ধিল দিব্য শ্বেত চামর ||
শ্রবণ নাড়িতে শুনি কিঙ্কিনীর রোল |              
দুই শৃঙ্গে তুলিয়া দিল সুবর্ণের খোল ||
সুবর্ণের ঝিকিমিকি করে মুখখান |                 
দেখিয়া কৌতুক বড় বলদের ঠান ||
বলদ সাজাইয়া নন্দী চাহে এক দৃষ্টে  |            
লাফ দিয়া চড়ে শি বলদের পৃষ্ঠে ||
চল চল বলিয়া ঠেলা দিল বাম পায় |        
আকাশে উঠিয়া বৃষ বায়ুগতি ধায় ||
দেব অধিষ্ঠান বৃষ চলে দেব সনে |           
শিবের মন বুঝিয়া চলে পুষ্পবনে ||
অন্তরীক্ষে চলে বৃষ বায়ু উড়ে ধূল |               
আঁখির নিমেষে গেল সরযুর কূল ||
সচকিত চারিদিকে চাহে শূলপাণি |                 
উচ্চৈঃস্বরে ডাকে শিব খেয়ানী খেয়ানী ||
কালুয়া ডোমের নারী গৌরী নাম তার |         
খেয়া নাও পাতিয়া শিবেরে করে পার ||
সাগর তরিয়া শিব আনন্দিত মন |             
বৃষ পৃষ্ঠে চড়ি গেল যথা পুষ্পবন ||
পুষ্পবনে গিয়া দেখে দেব মহেশ্বর |               
বিকশিত নানা পুষ্প গন্ধে মনোহর ||
মধুলোভে ভ্রমরা গুঞ্জরে ঝাঁকে ঝাঁকে |      
কুহু কুহু করিয়া কোকিলা পাখী ডাকে ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |           
পয়ার এড়িয়া বল লাচারীর গীত ||


.       ****************                                                        
সূচি...    


মিলনসাগর
*
পদ্মপত্রে অক্ষয় ধন                            চমকিত ত্রিলোচন
.                     পাখিনী দেখিল দূরে থাকি |
তৃষ্ণায় হইয়া অন্ধ                             না বুঝিয়া ভালমন্দ
.                     জল জ্ঞানে পিল চক্র পাখী ||
যেন মতে পিল জল                           টুটে আসে বুদ্ধি বল
.                    সকল শরীরে অগ্নি জ্বলে |
অগ্নিরস বেগ পাইয়া                           ফেলিলেক উগারিয়া
.                     আবার থুইল পদ্মদলে ||
পদ্মপত্রে হইয়া বন্দি                             পাইয়া মৃণাল সন্ধি
.                     পাতালে নামিল মহারস |
পাইয়া পাতাল পুরী                            জন্মিল নাগিনী নারী
.                     দেব কন্যা দেখিতে রূপসী ||
বারেতা পাইয়া নাগরাজে                   পাতালে বাজনা বাজে
.                     সম্ভ্রমে পূজিল নাগগণে |
যাহার যেই ব্যবহার                            দিয়া বস্ত্র অলঙ্কার
.                      বাড়াইয়া খুইল পদ্মবনে ||
উপজিল বিষহরী                                আনন্দিত সুরপুরী
.                      প্রসন্ন হইল বসুমতী ||
বিজয় গুপ্ত বলে সার                        মোর গতি নাহি আর
.                    দয়া কর দেবী পদ্মাবতী |
মহাকবি বিজয়গুপ্ত                         মিলনসাগর করিয়া যুক্ত
.                    প্রার্থনা করে পাঠকের প্রতি!

.                           ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                ৭

পাতালেতে মনসা জন্মিল শুভদিনে |                     
নারদ গিয়া জানাইল পিতামহ স্থানে ||
এতেক শুনিয়া ব্রহ্মা আনন্দিত মন |                       
ব্রহ্মা আসি করেন মায়ের নামকরণ ||
বিষমুখ দেখিয়া মায়ের নাম বিষহরী |                    
জগতের হিতকারী নাম জগৎ গৌরী ||
এতেক শুনিয়া নাগ আইল সত্বর |                    
আতুর নাছিয়া নাগ বসিল মনোহর ||
মাতৃমত করে দয়া নাহি শিশু ভেদ |              
সুবর্ণের কাটারি দিয়া নাড়ি করে ছেদ ||
পাতালেতে নাগগণ করে জয়ধ্বনি |               
সাত দিনে নাগগণ করিল উঠানি ||
মাতৃ ব্যবহারে নাগে পদ্মা লইয়া কোলে |         
স্নান করাইতে নিল ভাগীরথীর জলে ||
ভগিনী দেখিয়া নাগ মনে মনে আশা |                 
বাছিয়া থুইল নাম জয় মনসা ||
উপজিল বিষহরী জগতের মাও |                    
দশদিক প্রসন্ন শীতল বহে বাও ||
দয়া কর পদ্মাবতী পুরাও মনের আশা |         
জোকার দেও আয়োগণ জন্মিল মনসা ||
অন্তরীক্ষে পুষ্পবৃষ্টি করে দেবগণ |                
আকাশে ধুমধুমি বাদ্য বাজে ঘন ঘন ||
মহাদেবের কন্যা হইল জগত হরিষ |             
তখনে হইল কন্যা অষ্টম বরিষ ||
পুষ্পবনে পদ্মাবতী আছেন একেশ্বরী |            
অযোনিসম্ভবা কন্যা পরমা লুন্দরী ||
দেব কন্যা হইয়া পদ্মা না জানে আপনা |         
নাগিনী লক্ষণ ধরে কেশ মধ্যে ফণা ||
বিজয় গুপ্ত বলে নায়ক শুন গুণমণি |            
মনসা জন্মিল রে গাইনের দেও খুনি ||
বনমধ্যে একাকিনী আছে পদ্মাবতী |             
পুষ্প তুলিতে শিব গেল দৈবগতি ||
বন মধ্যে একেশ্বরী সঙ্গে কেহ নাই |              
অপরূপ দেখি চিনিল গোসাঞি ||
এক দৃষ্টে চাহেন চিন্তে মনে মনে |                
কোথা হইতে দিব্য কন্যা আসিল এখানে ||
পৃথিবীতে নারী নাহি ইহার সমতুল |              
ইন্দ্রের বিদ্যাধরী কি তুলিতে আসিল ফুল ||
সকল নারদ মুনি কহিল গুপ্ত কথা |               
পুষ্প বনে দিব্য কন্যা মিলাইলা বিধাতা ||
কন্যার রূপ যৌবন অদ্ভুত হেন বাসি |          
করিব গন্ধর্ব বিয়া লইয়া যাব কাশী ||
কামভাবে মহাদেব বলে অনুচিত |               
লজ্জায় বিকল পদ্মা শুনিতে কুৎসিত ||
কাহার শক্তি বুঝিতে পারে দেবের পরিপাটি |   
সংসারের নাথ হইয়া পদে পদে ঘাটী ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |            
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
.             ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                        ৮

কহ কহ সুবদনি               সাচে তুমি কোন জনি  |
পরম সুন্দর প্রথম যৌবন বনে বনে কেন একাকিনী  ||
এ বনে অসুর চরে           নারী নাহি তোমা পরে |
তোমার রূপে কেবা নাহি ভোলে পাছে তোমায় বল করে ||
উদার চরিত্র রামা                 তুমি যে ন্  চিন আমা |
দেবের ঈশ্বর দেব মহেশ্বর আমি যে সৃষ্টির সীমা ||
আমি যে সৃজিলাম তোমা কোন দেবতার ঝি |
তোমার দেব শরীরে নাগিনী লক্ষণ উহার কারণ কি |
দেখিয়া তোমার ঠান        কামে দহে মোর প্রাণ |
মদন অনলে প্রাণ ইহার উপায় কি ||
তুমি কুমারী সতী
মিলনসাগর অবশ্য চাহি তোমার পতি |
তুমি রূপবতী আমি গুণবান কি লয় তোমার মনে ||
বুঝিয়া কার্যের দশা
মিলনসাগর প্রণাম হইল মনসা |
বোলে তুমি আমার বাপ বৈদ্য বিজয় গুপ্তের ভরসা ||


.                        ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.              ৯

কামভাবে মহাদেব বলে অনুচিত |         
লজ্জায় বিকল পদ্মা শুনিতে কুৎসিত ||
নাকে হাত দিয়া পদ্মা বলে রাম রাম |    
শিবের চরণে পড়ি করিল প্রণাম ||
পদ্মা বলে বাপ তুমি পরম কারণ |            
না বুঝিয়া বল কেন কুৎসিত বচন ||
দেবের দেবতা তুমি পূজে ত্রিজগতে |     
সকল সংসার তুমি জান ভালমতে ||
আপনি সকল জান মুই বলব কি |         
চিনিতে নারিলা তুমি আপনার ঝি ||
চরণে ধরিয়া স্তুতি করে বার বার |       
হেন ছার বাক্য না বলিও আর ||
বিজয় গুপ্ত বলে ভাই হও সাবহিত |       
এই কালে বল ভাই লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
.             ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
.                          বিজয় গুপ্তের মধুর বচন ||


.                           ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.            ১১

পুষ্প বনে মহাদেব ভ্রমে কুতূহল |                
ফুটিল যতেক ফুল তুলিল সকল ||
কত পুষ্পের আগা ভাঙ্গে মোচাড়ে কলিকা |    
দেখিয়া বিষাদ যেন ভাবেরে চন্ডিকা ||
একেশ্বর তোলে ফুল সঙ্গে নাহি চন্ডী  |         
নানা পুষ্পে মহাদেব ভরিল করন্ডী ||
কত পুষ্পে সাজি ভরে কত পড়ে গায় |             
শূন্য ঘরে চন্ডী হেথা চৈতন্য পায় ||
চৈতন্য পাইয়া দেখে ঘরে কেহ নাই |           
আমা ভান্ডি পুষ্প বনে গেলেন গোসাঞি||
আঁচলে আঁচল বান্ধি শুইলাম এক ঠাঁই |        
তবুত রাখিতে নারিলাম পাগল শিবাই ||
বন মধ্যে ফোটে ফুল মূল্য নহে কড়া |         
তাহার লাগি ভান্ডে মোরে পাগল ভাঙ্গারা ||
ভাল করিলা শিব রে ভাড়িয়া গেলা ছলে |     
এবার পাইলে লাগ দেখিতাম কি ফল ফলে ||
কোপে গালি পাড়ে চন্ডী হইয়া গদগদ |          
সেই দেবীর বরে হওক সভার সম্পদ ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হল সাবহিত |           
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
.               ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |                
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||


.               ****************       

.                                                                                   
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                                ১৩

.                সই স্বরূপে কহিবা মোর ঝাটে |   
.                  প্রভু নি দেখেছ খেয়াঘাটে |
স্বামী মোর দুরাচার                             পরদারে মতি তার
.                তেকারণে গালি দিলাম রোষে |
দারুণ মদনের তাপে                        কোথা যেন গেল কোপে
.                চাহিয়া বেড়ায় দেশে দেশে ||
ডোমনী বলে সখী                          তোমার স্বামী নাহি দেখি
.                জানিয়া জিজ্ঞাস কি কারণে |
লাখে লাখে লোক যায়                        পার হইয়া খেয়া নায়
.                হুড়াহুড়ি কেবা কারে চিনে ||
সরযুর ঘাট জুড়ি                           খেয়া দিতে হইলাম বুড়ি
.                আজি বড় দেখিলাম কৌতুক |
একে বুড়া হইল পার                                তিন নয়ন তার
.                দেখিতে সুন্দর পঞ্চমুখ ||
কপালে চাঁদের ফোঁটা                         আকাশে পরশে জটা
.                বাম কান্ধে লোহার ত্রিশূল |
বলদে চড়িয়া যায়                              শিঙ্গা ডম্বরু বাজায়
.                দুই কর্ণে ধুতুরার ফুল ||
গলায় হাড়ের মালা                            পিন্ধনে বাঘের ছালা
.                সকল শরীর ভষ্মময় |
হৃদয়ে ফোপায় ফণী;                          তার শিরে জ্বলে মণি
.                তাহাকে দেখিতে করে ভয় ||
তপস্বীর বোল বলে                              নয়নে অনল জ্বলে
.                লম্বা লম্বা করে গোফ দাড়ি |
দন্ত ভ্রূকুটি করে                                নবগুণ তুলিয়া ধরে
.                পার হইয়া না দেয় খেয়ার কড়ি ||
ডোমনারী যত কয়,                              চন্ডিকার মনে লয়
.                মনে ভাবে ঐ মোর স্বামী |
বলে সখী ভাল কহ                            আজি তুমি ঘরে রহ
.                নাও লইয়া খেয়া দিব আমি ||
চন্ডীরে রাখিয়া নায়                            ডোমনারী ঘরে যায়
.                সানন্দে বিজয় গুপ্ত গায় |

.                         ****************       

.                                                                                            
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                ১৪

মনে মনে ভাবে দেবী কি হবে উপায় |                
দাঁড় বৈঠা লয়ে দেবী চলে খেয়া নায় ||
নানা মায়া জানে দেবী জগত ঈশ্বরী  |                
কপটে হইলেন দেবী স্বর্গ বিদ্যাধরী  ||
ক্ষণে ক্ষণে থাকে দেবী ক্ষণে মধ্যে যায় |                
পঞ্চস্বরে ডাকিয়া মধুর গীত গায় ||
হেন মতে আছেন দেবী জগতের মাতা |         
পুষ্পবনে মহাদেব শুনে এই কথা  ||
কোন কার্যে কপটে ভান্ডিয়া আইলাম চন্ডী |         
ঘরে গেলে দিবে গালি দৈব নহে খন্ডী  ||
ভালমন্দ না বুঝিয়া কোপেতে আগুলি  |                
মোর কাপে চন্ডিকা পদ্মারে দিবে গালি ||
বিরোধের পাশে দেবী একমনে আছে |                
এখন না দিব পদ্মা চন্ডিকার কাছে ||
( পদ্মার সঙ্গে বিবাদে কি জানি দৈব ঠেকে |        
লুকাইয়া রাখিব পদ্মা চন্ডিকা না দেখে ||
আমারে ভর্ত্সিয়া যদি কোপ হয় দূর |                
তবে সৎমায়ে ঝি করাব পরিচয় || )
ভাবিয়া চিন্তিয়া শিব স্থির করে মতি |                
পুষ্পের করন্ডী মধ্যে থুইল পদ্মাবতী ||
পুষ্প উপরে পুষ্প থুইল চারিভিতে |                
মধ্যে লুকাইয়া পদ্মা থুইল অলক্ষতে ||
গোসাঞির পুষ্পের সাজি সাতা পাঁচা ঘর |         
তার মধ্যে রহিল পদ্মা হইয়া স্বতন্তর ||
অনেক পুষ্প দিয়া শিব ঢাকিল করন্ডী |                
হাতে সাজি লইয়া শিব বৃষ পৃষ্ঠে চড়ি ||
বায়ু ভর করিয়া বৃষ চলিয়া যায় ঝাটে |                
আঁখির নিমেষে গেল সরযুর ঘাটে ||
ঘাটে দাঁড়াইয়া শিব চারিভিতে চায় |                 
আচম্বিতে দিব্য কন্যা দেখে খেয়া নায় ||
হাতসানে মহাদেব ডাকে বারে বার |                
কড়ি লইয়া ডোমনী মোরে কর পার ||
আইস আইস বলি শিব ডাকে ঘনে ঘন |                
কূলে দাঁড়াইয়া শিব রহিল তখন ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |                
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||


.               ****************       
.                                                                           
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                ১৫

( ডোমনী আয় নারী আয় আয় আয় |                
উচিত কড়ি লইয়া পার কর খেয়া নায় ||
বন মধ্যে বেলা অবশেষ সঙ্গে কেহ নাই |        
ডাকিলে বোলান না দেও অভরসা পাই || )
কূলে আয় আয় বলি শিব ঘন ঘন ডাকে |         
হাসিয়া বলে ডোমনারী লাজ নাই তোর মুখে ||
যাবার কালে ভ্রূকুটি করি না দিছ খেয়ার কড়ি |          
উফরী ফাফরী ডাক এখন কেন ছাড়ি ||
( চন্ডী বলে দেও ঠাকুর খেয়ার চারিপণ কড়ি |        
পরেতে পার হইয়া যাও দেব ত্রিপুরারি ||
গণিয়া বাছিয়া আগে খেয়ার কড়ি দে |                
কড়ি না পাইলে তোরে পার করে কে || )
ছন্দে বন্দে ডোমনী বলে শুনিয়া শিব হাসে |        
পার হইয়া না দিব কড়ি তোমার মনে আসে ||
( হের দেখ কান্ধে ঝুলি সকল ধন আছে |                
যেই ধন চাও সেই ধন দিব নাও আন কাছে || )
( ঝুলি নাড়েচাড়ে শিব ঝুলিতে নাই কড়ি |        
ক্রোধ করি ভাঙ্গ ধুতুরা খায় সের চারি |
শিবের ভাব দেখিয়া চন্ডী হাসিতে লাগিল |        
মনের দুঃখেতে কিছু উপহাস করিল ||
পারের কড়ি যদি তুমি নাহি দাও শিব |                
ত্রিশূল শিঙ্গা তোমার সব বিত্ত কেড়ে নিব ||
শিঙ্গা কেটে শিব হে আমার গলায় হার দিব |        
ত্রিশূল ভাঙ্গিয়া আমি লাঙ্গলের ফাল করিব ||
কটিধড়া নিয়ে যাব হংস বান্ধিবার |                
ডম্বুর দিয়া খেলিবে ছেলেরা আমার ||
কমন্ডুল নিয়া মম অম্বল ঢালিব |                        
ঝুলিতে ভরিয়া মন তুষ ঘষী রাখিব || )
ডোমনারী বলে তোর ধরিয়াছে রসে |                
তুমি যাবে খেয়ার নায় বলদ থোবা কিসে ||
সমুদ্র উথলে ঢেউ দেখিতে ভয় লাগে |                
বলদ এড়ি পার হও যদি বলদ নিবে বাঘে ||
হাসিয়া বলেন শিব শুন ডোমের ঝী |                
নায় না ধরিবে বলদ তোমার হইল কি ||
( আমার বলদের গায় তুলা হেন ভার |                
নায় না ধরে বলদ দিবেক সাঁতার || )
রহ রহ বলি শিব নৌকায় দিল পাও |                
কোথাকার ভাঙ্গারা মোর ভাঙ্গে ভরানাও ||
ভাঙ্গ ধুতরা আর নিম কালকূট |                        
হস্তে ধরি মহাদেব খাইল এক মুঠ ||
ভাঙ্গের খেয়ালে শিব ভোলা হয়ে যায় |                
দাড় দিয়া জল দিল ডোমনীর গায় ||
কেমন ডোম সে যে তোরে করেছে বিয়া |        
সে ঘরেতে আছে তোমারে রৌদ্রে থুইয়া ||
আমার মনে লয় যদি তোমার মনে রোচে |        
তোমার সঙ্গে গৃহবাসে মনের দুঃখ ঘোচে ||
কার্তিকের মাতা ঘরে আছে মহামায়া |                
তাহা হইতে অধিক তোমারে করি দয়া ||
( ডোমনী বলে তুমি ব্রাহ্মণের বেটা |                
ব্রাহ্মণ হইয়া ডোম হইবা কুলে রবে খোটা ||
যোড়হস্তে ডোমনী বলে শুনহ বচন |                
আপন পাসর কেন দেব ত্রিলোচন ||
কাশী হেন তীর্থ যদি ছাড় জগন্নাথ |                
দিব্য কর কহ গোসাঞি আমার সাক্ষাৎ ||
হাসিয়া বলেন শিব আমি দিব্য করি |                
তোমারে ছাড়িয়া যদি যাই গুরুপত্নী হরি ||
ভালমন্দ জ্ঞান নাই বুদ্ধি হল ক্ষে |                
সদা বলে ডোমনী মোরে আলিঙ্গন দে ||
আয় আয় বলি শিব ডাকে বিপরীত |                
বৈদ্য বিজয় গুপ্তের সরস রচিত || )


.               ****************       
.                                                                           
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                                ১৬


তুমি শিব ত্রিলোচন                             না বুঝি তোমার মন
.                   তোমার ঘরে দিব্য নারী আছে |
আমি ত ডোমের নারী                          তুমি শিব অধিকারী
.                  আমারে না লঙ্ঘিও তুমি সাচে ||
তুমি কোন গুণধর                             বাঘের ছাল তুমি পর
.                  তাতে তোমার এত পরিপাটি ||
মহাদেব বোলে তুমি                         তুমি বোল পাগল আমি
.                   আমার সৃজন এই স্থিতি ||
আমারে তর্জিয়া বোল                         দাড় বৈঠা তবে তোল
.                   তোর স্বামী মোর প্রতি মন |
মোর স্বামী খরতর,                                 শেষে উঠিয়া লড়
.                    সম্ভাবনা আছয়ে বলদ ||
আমাকে ভজিবে বল                          দাড় বৈঠা নায় তোল
.                        তোমার স্বামী আমার প্রদীপ ||
যে সময় যে চাও                              বুঝিয়া যদি নমা পাও
.                            অভাবে বলদ বেচিয়া দিব ||
কপট করিয়া কহে বাণী                        খেয়া নায় ডোমনারী
.                      শিব চন্ডী করে নানা রঙ্গ |
পদ্মাবতী পরশনে                                সানন্দে বিজয় ভণে
.                      যাহারে সদয় নারায়ণ ||
অন্তর্জালের অন্তর্ভুক্ত                             হইলেন কবি বিজয় গুপ্ত
,                   করেছে মিলনসাগর প্রণয়ন |
.                             ****************       
.                                                                                         
সূচি...    


মিলনসাগর
*
পার হইয়া মহাদেব মনে মনে হাসি |                
বৃষের পৃষ্ঠে চলিয়া গেল বারানসী ||
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |                
পদ্মাবতী জন্ম পালা এইখানে সোসর ||


.                             ****************       
.                                                                                         
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কহে কবি বিজয় গুপ্ত              যে জানে পরম তত্ত্ব
মনসা দেখিল বিদ্যমান ||
অন্তর্জালের অন্তর্ভুক্ত         হইলেন কবি বিজয় গুপ্ত
ওয়েবসাইটির মিলনসাগর নাম!

.                                     ****************                        সূচি...    


মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

মনসার জন্ম পালা   

       ২

আইলা মনসা দেবী না করি বিচার |
উনকোটি নাগ লইয়া দিলা পাটয়ার ||
রত্নময় সিংহাসনে বসিলা বিষহরি |
বাম পাশে বসে নেতা রজক কুমারী ||
সোনার খাটে বস দেবী রূপার খাটে পাও |
দন্ডে দন্ডে পড়ে শ্বেত চামরের বাও ||
হরষিত পৃথিবীতে নামিল হর সুতা |
আসন চাপিয়া বসে দেবী হরের দুহিতা ||
জালু মালু তাহারা সেবক দুই ভাই |
বামপাশে পুষ্প যোগায় মালিনী গোড়াই ||
ক্ষীর নদী হইতে উঠে গরলের ফণা |
মুখ হইতে পড়ে বিষ যেন অগ্নিকণা ||
শ্রীহরি নারায়ণ ভাবিয়া এক চিতে |
মনসার চরণে গীত রচিল বিজয় গুপ্তে ||
মনসামঙ্গল কাব্য তুলি মিলনসাগরে |
বঙ্গীয় সাম্রাজ্য-জাল  বাড়ে সবিস্তারে ||

.           ****************    
.                                                                           
সূচি...    


মিলনসাগর
*
*
মনসামঙ্গল কাব্যের সূচি
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

মনসার জন্ম পালা


ওলো শুন আদ্যের কাহিনী |
মুই হেন সেবকে              তোমার শরণ লইলাম গো
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

মনসার জন্ম পালা   

  ৩

বন্দিলাম বন্দিলাম মাগো যন্ত্রে দিয়া ঘা |                
অবধান কর মাগো জগৎ গৌরী মা  ||
হংস বাহনে বন্দম দেবী পদ্মাবতী |                            
অষ্টনাগ সহিত মা এস শীঘ্র গতি ||
দুই হংস দুই দিকে মধ্যে অজগর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                ৪

শ্রাবণ মাসের রবিবারে মনসা পঞ্চমী  |       
দ্বিতীয় প্রহর রাত্রি নিদ্রা যায় স্বামী  ||
নিদ্রায় ব্যাকুল লোক না জাগে একজন |      
হেনকালে বিজয় গুপ্ত দেখিল স্বপন ||
গৌরবর্ণ শরীর এক ব্রাহ্মণের নারী  |         
রত্নময় অলঙ্কার  দিব্য বস্ত্রধারী ||
তপ্ত কাঞ্চন য়েন শরীরের জ্যোতি  |         
ইন্দ্রের শচী কিম্বা মদনের রতি ||
চাচর মাথার কেশ জিনিয়া চামর  |          
সর্বাঙ্গেতে বেড়িয়াছে সর্প অজগর ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                ৫

পূর্বে বারানসী রাজা ছিল দিবদাস  |       
তারে ঘুচাইয়া শিব তথায় করে বাস ||
পৃথিবী দুর্লভ স্থান নেই কাশীপুর  |         
তথায় বসতি করেন সৃষ্টির ঠাকুর  ||
ভূমি অন্তরীক্ষ পুরী যক্ষগণে রাখে |         
দেবগণ লইয়া শিব নিত্য তথা থাকে ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                                ৬

দেখিয়া পুষ্পের  বনে                     আনন্দিত ত্রিলোচন
.                      সুললিত গন্ধে মনোহর |
সরস  বসন্ত কালে                      বিকশিত ডালে ডালে
.                     মধু লোভে গুঞ্জরে ভ্রমর ||
চাপা নাগেশ্বর জাতি                        লবঙ্গ মালতী যুথি
.                     কেওয়া কস্তুরী কুরুবক |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                                               ১০
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.                  ১২

ভাল ভান্ডিলা শিব পলাইয়া গেলা দূর |                 
এবার লাগল পাইলে দপ্প করিতাম চুর ||
আঁচলে আঁচল বান্ধি শুইলাম এক ঠাঁই |                
তবুত রাখিতে নারিলাম পাগল শিবাই ||
কপট চরিত্র দেখি খলের সঙ্গে সঙ্গ  |                 
যাবার কালে লাগ পাইলে দেখিতাম রঙ্গ ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল    

মনসার জন্ম পালা   

.               ১৭

( কার্য বুঝিয়া দেবী চিন্তে মনে মনে |                
মায়াপতি ঘর তোলাইল সেই বনে || )
সাচা মিছা কথা কহি করে কানাকানী |                
শিব লইয়া সেই ঘরে চলিল ডোমনী ||
নানা দ্রব্যে পরিপূর্ণ সেই গৃহবাস |                
হেনরূপ সজ্জা হইল চন্ডীর আবাস ||
মদনে মোহিত শিব নাচে কুকূহলে |                
শূন্য ঘরে চন্ডীরে ধরিতে চাহে বলে ||
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি
কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে
জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো।
srimilansengupta@yahoo.co.in