কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
যন্ত্র পড়ে থাকে যদি লক্ষ জনার মাঝে |
যান্ত্রিক না হলে যন্ত্র কেমন করে বাজে ||
আমি বটে যন্ত্র মাগো যন্ত্রী বটে তুমি |
যা বলে বাজাও যন্ত্র তা বলিব আমি ||
জনক জননী বন্দম শিরের ভূষণ |
যাহার প্রসাদে দেখি এ তিন ভুবন ||
তাল যন্ত্রে বন্দি আর মন্দিরার ঘা |
কশ্যপ কদ্রূপ বন্দি নাগের বাপ্ মা ||
সকল বন্দিলাম ভাই কি বলিব শেষ |
শিরে বন্দম গুরু যে করেছে উপদেশ ||
গুরুর চরণ ভাবি যেই নরে গায় |
সরস্বতী মাতা তার পয়ার যোগায় ||
একে একে বন্দিলাম যত দেব গণ |
ময়ূর বাহনে বন্দম দেব ষড়ানন ||
পুবে বন্দিয়া গাই দেব দিবাকর |
পশ্চিমে বন্দিয়া গাই দেব শশধর ||
হিমালয় পর্বত মাগো বন্দিলাম উত্তরে |
যবদ্বীপ বেড়িয়াছে লবণ সাগরে ||
চারিদিকে বন্দিলাম মাগো কি বন্দিব আর |
আমি দেখিয়া দয়া কর একবার ||
গাইন বন্দম বাইন বন্দম সঙ্গের পঞ্চ ভাই |
ঘটে অধিষ্ঠান কর বিষহরি আই ||
ছাড়িলাম বন্দনা ভাই গীতে দাও মন |
স্বপ্ন অধ্যায় পালা বলি শুন সর্বজন ||
রাম ভাব রাম চিন্ত রাম কর সার |
মনসার চরণ বিনা গতি নাহি আর ||
বৈদ্য বিজয়গুপ্তের মধুর ভারতী |
সর্বক্ষণ রক্ষা যারে করেন পদ্মাবতী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কহিলাম সকল কথা যে জানি বৃত্তান্ত |
গীত নহে এ জানিও মনসার মন্ত্র ||
যথাগীত শুনি আমি তোমার রচিত |
সত্য করি কহি তথা যাইব নিশ্চিত ||
মোর গীত শুনি যার হৃদয় কৌতুক |
মোর বরে হবে তার মহাধন সুখ ||
অহঙ্কারে মোর গীত করে উপহাস |
মোর কোপে হইবে তার সবংশে বিনাশ ||
যাহার ঘরে গায় গীত আমার স্তবন |
পাতিয়া বিচিত্র ঘট উত্তম আসন ||
জয় জয় হুলাহুলি দিয়া বলিদান |
মোর বরে হবে তার সর্বত্র কল্যাণ ||
অপুত্রার পুত্র হবে নির্ধনের ধন |
রোগীর রোগ দূর হয় বন্দী বিমোচন ||
নারী যার ঘরে নাই নারী হয় ঘরে |
মনের অভীষ্ট সিদ্ধ হয় মোর বরে ||
হেনমতে স্বপ্ন কথা কহিয়া উপদেশ |
নাগরথে চড়ি গেল আপনার দেশ ||
স্বপ্ন দেখিয়া বিজয় গুপ্তের দূরে গেল নিদ |
হরি হরি নারায়ণ স্মরয়ে গোবিন্দ ||
প্রভাত সময়ে প্রকাশ দশদিশা |
স্নান করি বিজয় গুপ্ত পূজিল মনসা ||
হরি নারায়ণ ভাবি নির্মল করে চিত |
রচিতে আরম্ভ করে মনসার গীত ||
যেনমতে পদ্মাবতী করিয়া সন্নিধান |
তেনমতে করে বিজয় গীতের নির্মাণ ||
ঋতু শূন্য বেদ শশী পরিমিত শক |
সুলতান হোসেন শা নৃপতি তিলক ||
সংগ্রামে অর্জুন রাজা প্রভাতের রবি |
নিজ বাহুবলে রাজা শাসিল পৃথিবী ||
রাজার পালনে প্রজা সুখ ভুজে নিত |
মুল্লুক ফতেয়াবাদ বাঙ্গজোড়া তকসিম ||
পশ্চিমে ঘাগর নদী পূর্বে গন্ডেশ্বর |
মধ্যে ফুল্লশ্রী গ্রাম পন্ডিত নগর ||
চারি বেদধারী তথা ব্রাহ্মণ সকল |
বৈদ্যজাত বসে নিজ শাস্ত্রেতে কুশল ||
কায়স্থজাতি বসে তথা লিখনের সুর |
অন্য জাতি বসে নিজ শাস্ত্রে সুচতুর ||
স্থান গুণে যেই জন্মে সেই গুণময় |
হেন ফুল্লশ্রী গ্রামে বসিত বিজয় ||
গাইন লইয়া তাল ধরে জন্ম নানাজাতি ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন গীতে দাও মতি ||
যোড় হাতে সভাকারে করে পরিহার |
গীতের যতেক দোষ ক্ষমিবা আমার ||
স্বভাবে পাঁচালী গীত নানা দোষময় |
না লবে গীতের দোষ পন্ডিত যেবা হয় ||
বিজয় গুপ্ত বলে হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারীর গীত ||
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |
স্বপ্নাধ্যায় পালা গাই এইখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
আজু কেন তোমার মন না বুঝি গোসাঞি |
মোর ঘর হইতে বুঝি যাবা অন্য ধাই ||
কার্যের গৌরবে যদি যাও দৈবগতি |
যথা যাও তথা মুই যাইব সঙ্গতি ||
এতেক বলিয়া দেবী শুইলা কুতূহলে |
দৃঢ় মুষ্টি ধরিলেক শিবের আঁচলে ||
আঁচলে আঁচলে গ্রন্থী বাঁধিয়া নির্যাস |
হরিষ মনে শুইলা দেবী শিবের বামপাশ ||
চন্ডিকার কথায় শিবের মনে লাগে ব্যথা |
কপট প্রবন্ধে কিছু কহিতে লাগে কথা ||
কথার রসে দেবীর মাতিয়া গেল মন |
এক সিংহাসনে দোহে করেন শয়ন ||
চিত্তে সুখ নাহি গোসাঞি যাবে পুষ্পবাড়ী |
মিছামিছি নিদ্রা যায় ঘনশ্বাস ছাড়ি ||
নিদ্রায় ভুলিল মন জানিল নিশ্চয় |
হরিষ মনে শুইল দেবী খন্ডিল বিস্ময় ||
একেশ্বর যাবে দেবীর শান্তি নাহি চিতে |
জাগিতে জাগিতে নিদ্রা আসিল আচম্বিতে ||
মাথা তুলিয়া শিব চাহে ঘন ঘন |
নিশ্চয় জানিল দেবীর নিদ্রার লক্ষণ ||
নাসিকার শ্বাস দেবীর বহে ঘড় ঘড় |
চন্ডীরে নিদ্রালি দিয়া বাহিরে গেলা হর ||
হাতসানে কহে কথা না করে শবদ |
নন্দীরে আদেশ করেন সাজারে বলদ ||
শিবের আদেশ নন্দী মস্তকেতে বন্দি |
আথেব্যাথে বৃষরথ সাজাইল নন্দী ||
ঐরাবত হস্তী যেন বৃষের শরীর |
সুবর্ণের খুর দিল খুরের বাহির ||
পৃষ্ঠেতে বান্ধিল রম্য পাটের বসন |
গলায় বান্ধিল ঘন্টা বাজে ঢন ঢন ||
বুকে পৃষ্ঠে চারি পাশে বান্ধিল ঘাঘর |
লেজেতে বান্ধিল দিব্য শ্বেত চামর ||
শ্রবণ নাড়িতে শুনি কিঙ্কিনীর রোল |
দুই শৃঙ্গে তুলিয়া দিল সুবর্ণের খোল ||
সুবর্ণের ঝিকিমিকি করে মুখখান |
দেখিয়া কৌতুক বড় বলদের ঠান ||
বলদ সাজাইয়া নন্দী চাহে এক দৃষ্টে |
লাফ দিয়া চড়ে শি বলদের পৃষ্ঠে ||
চল চল বলিয়া ঠেলা দিল বাম পায় |
আকাশে উঠিয়া বৃষ বায়ুগতি ধায় ||
দেব অধিষ্ঠান বৃষ চলে দেব সনে |
শিবের মন বুঝিয়া চলে পুষ্পবনে ||
অন্তরীক্ষে চলে বৃষ বায়ু উড়ে ধূল |
আঁখির নিমেষে গেল সরযুর কূল ||
সচকিত চারিদিকে চাহে শূলপাণি |
উচ্চৈঃস্বরে ডাকে শিব খেয়ানী খেয়ানী ||
কালুয়া ডোমের নারী গৌরী নাম তার |
খেয়া নাও পাতিয়া শিবেরে করে পার ||
সাগর তরিয়া শিব আনন্দিত মন |
বৃষ পৃষ্ঠে চড়ি গেল যথা পুষ্পবন ||
পুষ্পবনে গিয়া দেখে দেব মহেশ্বর |
বিকশিত নানা পুষ্প গন্ধে মনোহর ||
মধুলোভে ভ্রমরা গুঞ্জরে ঝাঁকে ঝাঁকে |
কুহু কুহু করিয়া কোকিলা পাখী ডাকে ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারীর গীত ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
পদ্মপত্রে অক্ষয় ধন চমকিত ত্রিলোচন
. পাখিনী দেখিল দূরে থাকি |
তৃষ্ণায় হইয়া অন্ধ না বুঝিয়া ভালমন্দ
. জল জ্ঞানে পিল চক্র পাখী ||
যেন মতে পিল জল টুটে আসে বুদ্ধি বল
. সকল শরীরে অগ্নি জ্বলে |
অগ্নিরস বেগ পাইয়া ফেলিলেক উগারিয়া
. আবার থুইল পদ্মদলে ||
পদ্মপত্রে হইয়া বন্দি পাইয়া মৃণাল সন্ধি
. পাতালে নামিল মহারস |
পাইয়া পাতাল পুরী জন্মিল নাগিনী নারী
. দেব কন্যা দেখিতে রূপসী ||
বারেতা পাইয়া নাগরাজে পাতালে বাজনা বাজে
. সম্ভ্রমে পূজিল নাগগণে |
যাহার যেই ব্যবহার দিয়া বস্ত্র অলঙ্কার
. বাড়াইয়া খুইল পদ্মবনে ||
উপজিল বিষহরী আনন্দিত সুরপুরী
. প্রসন্ন হইল বসুমতী ||
বিজয় গুপ্ত বলে সার মোর গতি নাহি আর
. দয়া কর দেবী পদ্মাবতী |
মহাকবি বিজয়গুপ্ত মিলনসাগর করিয়া যুক্ত
. প্রার্থনা করে পাঠকের প্রতি!
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৭
পাতালেতে মনসা জন্মিল শুভদিনে |
নারদ গিয়া জানাইল পিতামহ স্থানে ||
এতেক শুনিয়া ব্রহ্মা আনন্দিত মন |
ব্রহ্মা আসি করেন মায়ের নামকরণ ||
বিষমুখ দেখিয়া মায়ের নাম বিষহরী |
জগতের হিতকারী নাম জগৎ গৌরী ||
এতেক শুনিয়া নাগ আইল সত্বর |
আতুর নাছিয়া নাগ বসিল মনোহর ||
মাতৃমত করে দয়া নাহি শিশু ভেদ |
সুবর্ণের কাটারি দিয়া নাড়ি করে ছেদ ||
পাতালেতে নাগগণ করে জয়ধ্বনি |
সাত দিনে নাগগণ করিল উঠানি ||
মাতৃ ব্যবহারে নাগে পদ্মা লইয়া কোলে |
স্নান করাইতে নিল ভাগীরথীর জলে ||
ভগিনী দেখিয়া নাগ মনে মনে আশা |
বাছিয়া থুইল নাম জয় মনসা ||
উপজিল বিষহরী জগতের মাও |
দশদিক প্রসন্ন শীতল বহে বাও ||
দয়া কর পদ্মাবতী পুরাও মনের আশা |
জোকার দেও আয়োগণ জন্মিল মনসা ||
অন্তরীক্ষে পুষ্পবৃষ্টি করে দেবগণ |
আকাশে ধুমধুমি বাদ্য বাজে ঘন ঘন ||
মহাদেবের কন্যা হইল জগত হরিষ |
তখনে হইল কন্যা অষ্টম বরিষ ||
পুষ্পবনে পদ্মাবতী আছেন একেশ্বরী |
অযোনিসম্ভবা কন্যা পরমা লুন্দরী ||
দেব কন্যা হইয়া পদ্মা না জানে আপনা |
নাগিনী লক্ষণ ধরে কেশ মধ্যে ফণা ||
বিজয় গুপ্ত বলে নায়ক শুন গুণমণি |
মনসা জন্মিল রে গাইনের দেও খুনি ||
বনমধ্যে একাকিনী আছে পদ্মাবতী |
পুষ্প তুলিতে শিব গেল দৈবগতি ||
বন মধ্যে একেশ্বরী সঙ্গে কেহ নাই |
অপরূপ দেখি চিনিল গোসাঞি ||
এক দৃষ্টে চাহেন চিন্তে মনে মনে |
কোথা হইতে দিব্য কন্যা আসিল এখানে ||
পৃথিবীতে নারী নাহি ইহার সমতুল |
ইন্দ্রের বিদ্যাধরী কি তুলিতে আসিল ফুল ||
সকল নারদ মুনি কহিল গুপ্ত কথা |
পুষ্প বনে দিব্য কন্যা মিলাইলা বিধাতা ||
কন্যার রূপ যৌবন অদ্ভুত হেন বাসি |
করিব গন্ধর্ব বিয়া লইয়া যাব কাশী ||
কামভাবে মহাদেব বলে অনুচিত |
লজ্জায় বিকল পদ্মা শুনিতে কুৎসিত ||
কাহার শক্তি বুঝিতে পারে দেবের পরিপাটি |
সংসারের নাথ হইয়া পদে পদে ঘাটী ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৮
কহ কহ সুবদনি সাচে তুমি কোন জনি |
পরম সুন্দর প্রথম যৌবন বনে বনে কেন একাকিনী ||
এ বনে অসুর চরে নারী নাহি তোমা পরে |
তোমার রূপে কেবা নাহি ভোলে পাছে তোমায় বল করে ||
উদার চরিত্র রামা তুমি যে ন্ চিন আমা |
দেবের ঈশ্বর দেব মহেশ্বর আমি যে সৃষ্টির সীমা ||
আমি যে সৃজিলাম তোমা কোন দেবতার ঝি |
তোমার দেব শরীরে নাগিনী লক্ষণ উহার কারণ কি |
দেখিয়া তোমার ঠান কামে দহে মোর প্রাণ |
মদন অনলে প্রাণ ইহার উপায় কি ||
তুমি কুমারী সতী মিলনসাগর অবশ্য চাহি তোমার পতি |
তুমি রূপবতী আমি গুণবান কি লয় তোমার মনে ||
বুঝিয়া কার্যের দশা মিলনসাগর প্রণাম হইল মনসা |
বোলে তুমি আমার বাপ বৈদ্য বিজয় গুপ্তের ভরসা ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৯
কামভাবে মহাদেব বলে অনুচিত |
লজ্জায় বিকল পদ্মা শুনিতে কুৎসিত ||
নাকে হাত দিয়া পদ্মা বলে রাম রাম |
শিবের চরণে পড়ি করিল প্রণাম ||
পদ্মা বলে বাপ তুমি পরম কারণ |
না বুঝিয়া বল কেন কুৎসিত বচন ||
দেবের দেবতা তুমি পূজে ত্রিজগতে |
সকল সংসার তুমি জান ভালমতে ||
আপনি সকল জান মুই বলব কি |
চিনিতে নারিলা তুমি আপনার ঝি ||
চরণে ধরিয়া স্তুতি করে বার বার |
হেন ছার বাক্য না বলিও আর ||
বিজয় গুপ্ত বলে ভাই হও সাবহিত |
এই কালে বল ভাই লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১১
পুষ্প বনে মহাদেব ভ্রমে কুতূহল |
ফুটিল যতেক ফুল তুলিল সকল ||
কত পুষ্পের আগা ভাঙ্গে মোচাড়ে কলিকা |
দেখিয়া বিষাদ যেন ভাবেরে চন্ডিকা ||
একেশ্বর তোলে ফুল সঙ্গে নাহি চন্ডী |
নানা পুষ্পে মহাদেব ভরিল করন্ডী ||
কত পুষ্পে সাজি ভরে কত পড়ে গায় |
শূন্য ঘরে চন্ডী হেথা চৈতন্য পায় ||
চৈতন্য পাইয়া দেখে ঘরে কেহ নাই |
আমা ভান্ডি পুষ্প বনে গেলেন গোসাঞি||
আঁচলে আঁচল বান্ধি শুইলাম এক ঠাঁই |
তবুত রাখিতে নারিলাম পাগল শিবাই ||
বন মধ্যে ফোটে ফুল মূল্য নহে কড়া |
তাহার লাগি ভান্ডে মোরে পাগল ভাঙ্গারা ||
ভাল করিলা শিব রে ভাড়িয়া গেলা ছলে |
এবার পাইলে লাগ দেখিতাম কি ফল ফলে ||
কোপে গালি পাড়ে চন্ডী হইয়া গদগদ |
সেই দেবীর বরে হওক সভার সম্পদ ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হল সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
মনসামঙ্গল পড় হইয়া সবে প্রীত |
অন্তরজালে মিলনসাগর তোলে এই গীত ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১৩
. সই স্বরূপে কহিবা মোর ঝাটে |
. প্রভু নি দেখেছ খেয়াঘাটে |
স্বামী মোর দুরাচার পরদারে মতি তার
. তেকারণে গালি দিলাম রোষে |
দারুণ মদনের তাপে কোথা যেন গেল কোপে
. চাহিয়া বেড়ায় দেশে দেশে ||
ডোমনী বলে সখী তোমার স্বামী নাহি দেখি
. জানিয়া জিজ্ঞাস কি কারণে |
লাখে লাখে লোক যায় পার হইয়া খেয়া নায়
. হুড়াহুড়ি কেবা কারে চিনে ||
সরযুর ঘাট জুড়ি খেয়া দিতে হইলাম বুড়ি
. আজি বড় দেখিলাম কৌতুক |
একে বুড়া হইল পার তিন নয়ন তার
. দেখিতে সুন্দর পঞ্চমুখ ||
কপালে চাঁদের ফোঁটা আকাশে পরশে জটা
. বাম কান্ধে লোহার ত্রিশূল |
বলদে চড়িয়া যায় শিঙ্গা ডম্বরু বাজায়
. দুই কর্ণে ধুতুরার ফুল ||
গলায় হাড়ের মালা পিন্ধনে বাঘের ছালা
. সকল শরীর ভষ্মময় |
হৃদয়ে ফোপায় ফণী; তার শিরে জ্বলে মণি
. তাহাকে দেখিতে করে ভয় ||
তপস্বীর বোল বলে নয়নে অনল জ্বলে
. লম্বা লম্বা করে গোফ দাড়ি |
দন্ত ভ্রূকুটি করে নবগুণ তুলিয়া ধরে
. পার হইয়া না দেয় খেয়ার কড়ি ||
ডোমনারী যত কয়, চন্ডিকার মনে লয়
. মনে ভাবে ঐ মোর স্বামী |
বলে সখী ভাল কহ আজি তুমি ঘরে রহ
. নাও লইয়া খেয়া দিব আমি ||
চন্ডীরে রাখিয়া নায় ডোমনারী ঘরে যায়
. সানন্দে বিজয় গুপ্ত গায় |
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১৪
মনে মনে ভাবে দেবী কি হবে উপায় |
দাঁড় বৈঠা লয়ে দেবী চলে খেয়া নায় ||
নানা মায়া জানে দেবী জগত ঈশ্বরী |
কপটে হইলেন দেবী স্বর্গ বিদ্যাধরী ||
ক্ষণে ক্ষণে থাকে দেবী ক্ষণে মধ্যে যায় |
পঞ্চস্বরে ডাকিয়া মধুর গীত গায় ||
হেন মতে আছেন দেবী জগতের মাতা |
পুষ্পবনে মহাদেব শুনে এই কথা ||
কোন কার্যে কপটে ভান্ডিয়া আইলাম চন্ডী |
ঘরে গেলে দিবে গালি দৈব নহে খন্ডী ||
ভালমন্দ না বুঝিয়া কোপেতে আগুলি |
মোর কাপে চন্ডিকা পদ্মারে দিবে গালি ||
বিরোধের পাশে দেবী একমনে আছে |
এখন না দিব পদ্মা চন্ডিকার কাছে ||
( পদ্মার সঙ্গে বিবাদে কি জানি দৈব ঠেকে |
লুকাইয়া রাখিব পদ্মা চন্ডিকা না দেখে ||
আমারে ভর্ত্সিয়া যদি কোপ হয় দূর |
তবে সৎমায়ে ঝি করাব পরিচয় || )
ভাবিয়া চিন্তিয়া শিব স্থির করে মতি |
পুষ্পের করন্ডী মধ্যে থুইল পদ্মাবতী ||
পুষ্প উপরে পুষ্প থুইল চারিভিতে |
মধ্যে লুকাইয়া পদ্মা থুইল অলক্ষতে ||
গোসাঞির পুষ্পের সাজি সাতা পাঁচা ঘর |
তার মধ্যে রহিল পদ্মা হইয়া স্বতন্তর ||
অনেক পুষ্প দিয়া শিব ঢাকিল করন্ডী |
হাতে সাজি লইয়া শিব বৃষ পৃষ্ঠে চড়ি ||
বায়ু ভর করিয়া বৃষ চলিয়া যায় ঝাটে |
আঁখির নিমেষে গেল সরযুর ঘাটে ||
ঘাটে দাঁড়াইয়া শিব চারিভিতে চায় |
আচম্বিতে দিব্য কন্যা দেখে খেয়া নায় ||
হাতসানে মহাদেব ডাকে বারে বার |
কড়ি লইয়া ডোমনী মোরে কর পার ||
আইস আইস বলি শিব ডাকে ঘনে ঘন |
কূলে দাঁড়াইয়া শিব রহিল তখন ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১৫
( ডোমনী আয় নারী আয় আয় আয় |
উচিত কড়ি লইয়া পার কর খেয়া নায় ||
বন মধ্যে বেলা অবশেষ সঙ্গে কেহ নাই |
ডাকিলে বোলান না দেও অভরসা পাই || )
কূলে আয় আয় বলি শিব ঘন ঘন ডাকে |
হাসিয়া বলে ডোমনারী লাজ নাই তোর মুখে ||
যাবার কালে ভ্রূকুটি করি না দিছ খেয়ার কড়ি |
উফরী ফাফরী ডাক এখন কেন ছাড়ি ||
( চন্ডী বলে দেও ঠাকুর খেয়ার চারিপণ কড়ি |
পরেতে পার হইয়া যাও দেব ত্রিপুরারি ||
গণিয়া বাছিয়া আগে খেয়ার কড়ি দে |
কড়ি না পাইলে তোরে পার করে কে || )
ছন্দে বন্দে ডোমনী বলে শুনিয়া শিব হাসে |
পার হইয়া না দিব কড়ি তোমার মনে আসে ||
( হের দেখ কান্ধে ঝুলি সকল ধন আছে |
যেই ধন চাও সেই ধন দিব নাও আন কাছে || )
( ঝুলি নাড়েচাড়ে শিব ঝুলিতে নাই কড়ি |
ক্রোধ করি ভাঙ্গ ধুতুরা খায় সের চারি |
শিবের ভাব দেখিয়া চন্ডী হাসিতে লাগিল |
মনের দুঃখেতে কিছু উপহাস করিল ||
পারের কড়ি যদি তুমি নাহি দাও শিব |
ত্রিশূল শিঙ্গা তোমার সব বিত্ত কেড়ে নিব ||
শিঙ্গা কেটে শিব হে আমার গলায় হার দিব |
ত্রিশূল ভাঙ্গিয়া আমি লাঙ্গলের ফাল করিব ||
কটিধড়া নিয়ে যাব হংস বান্ধিবার |
ডম্বুর দিয়া খেলিবে ছেলেরা আমার ||
কমন্ডুল নিয়া মম অম্বল ঢালিব |
ঝুলিতে ভরিয়া মন তুষ ঘষী রাখিব || )
ডোমনারী বলে তোর ধরিয়াছে রসে |
তুমি যাবে খেয়ার নায় বলদ থোবা কিসে ||
সমুদ্র উথলে ঢেউ দেখিতে ভয় লাগে |
বলদ এড়ি পার হও যদি বলদ নিবে বাঘে ||
হাসিয়া বলেন শিব শুন ডোমের ঝী |
নায় না ধরিবে বলদ তোমার হইল কি ||
( আমার বলদের গায় তুলা হেন ভার |
নায় না ধরে বলদ দিবেক সাঁতার || )
রহ রহ বলি শিব নৌকায় দিল পাও |
কোথাকার ভাঙ্গারা মোর ভাঙ্গে ভরানাও ||
ভাঙ্গ ধুতরা আর নিম কালকূট |
হস্তে ধরি মহাদেব খাইল এক মুঠ ||
ভাঙ্গের খেয়ালে শিব ভোলা হয়ে যায় |
দাড় দিয়া জল দিল ডোমনীর গায় ||
কেমন ডোম সে যে তোরে করেছে বিয়া |
সে ঘরেতে আছে তোমারে রৌদ্রে থুইয়া ||
আমার মনে লয় যদি তোমার মনে রোচে |
তোমার সঙ্গে গৃহবাসে মনের দুঃখ ঘোচে ||
কার্তিকের মাতা ঘরে আছে মহামায়া |
তাহা হইতে অধিক তোমারে করি দয়া ||
( ডোমনী বলে তুমি ব্রাহ্মণের বেটা |
ব্রাহ্মণ হইয়া ডোম হইবা কুলে রবে খোটা ||
যোড়হস্তে ডোমনী বলে শুনহ বচন |
আপন পাসর কেন দেব ত্রিলোচন ||
কাশী হেন তীর্থ যদি ছাড় জগন্নাথ |
দিব্য কর কহ গোসাঞি আমার সাক্ষাৎ ||
হাসিয়া বলেন শিব আমি দিব্য করি |
তোমারে ছাড়িয়া যদি যাই গুরুপত্নী হরি ||
ভালমন্দ জ্ঞান নাই বুদ্ধি হল ক্ষে |
সদা বলে ডোমনী মোরে আলিঙ্গন দে ||
আয় আয় বলি শিব ডাকে বিপরীত |
বৈদ্য বিজয় গুপ্তের সরস রচিত || )
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১৬
তুমি শিব ত্রিলোচন না বুঝি তোমার মন
. তোমার ঘরে দিব্য নারী আছে |
আমি ত ডোমের নারী তুমি শিব অধিকারী
. আমারে না লঙ্ঘিও তুমি সাচে ||
তুমি কোন গুণধর বাঘের ছাল তুমি পর
. তাতে তোমার এত পরিপাটি ||
মহাদেব বোলে তুমি তুমি বোল পাগল আমি
. আমার সৃজন এই স্থিতি ||
আমারে তর্জিয়া বোল দাড় বৈঠা তবে তোল
. তোর স্বামী মোর প্রতি মন |
মোর স্বামী খরতর, শেষে উঠিয়া লড়
. সম্ভাবনা আছয়ে বলদ ||
আমাকে ভজিবে বল দাড় বৈঠা নায় তোল
. তোমার স্বামী আমার প্রদীপ ||
যে সময় যে চাও বুঝিয়া যদি নমা পাও
. অভাবে বলদ বেচিয়া দিব ||
কপট করিয়া কহে বাণী খেয়া নায় ডোমনারী
. শিব চন্ডী করে নানা রঙ্গ |
পদ্মাবতী পরশনে সানন্দে বিজয় ভণে
. যাহারে সদয় নারায়ণ ||
অন্তর্জালের অন্তর্ভুক্ত হইলেন কবি বিজয় গুপ্ত
, করেছে মিলনসাগর প্রণয়ন |
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
পার হইয়া মহাদেব মনে মনে হাসি |
বৃষের পৃষ্ঠে চলিয়া গেল বারানসী ||
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |
পদ্মাবতী জন্ম পালা এইখানে সোসর ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কহে কবি বিজয় গুপ্ত যে জানে পরম তত্ত্ব মনসা দেখিল বিদ্যমান || অন্তর্জালের অন্তর্ভুক্ত হইলেন কবি বিজয় গুপ্ত ওয়েবসাইটির মিলনসাগর নাম!
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
২
আইলা মনসা দেবী না করি বিচার |
উনকোটি নাগ লইয়া দিলা পাটয়ার ||
রত্নময় সিংহাসনে বসিলা বিষহরি |
বাম পাশে বসে নেতা রজক কুমারী ||
সোনার খাটে বস দেবী রূপার খাটে পাও |
দন্ডে দন্ডে পড়ে শ্বেত চামরের বাও ||
হরষিত পৃথিবীতে নামিল হর সুতা |
আসন চাপিয়া বসে দেবী হরের দুহিতা ||
জালু মালু তাহারা সেবক দুই ভাই |
বামপাশে পুষ্প যোগায় মালিনী গোড়াই ||
ক্ষীর নদী হইতে উঠে গরলের ফণা |
মুখ হইতে পড়ে বিষ যেন অগ্নিকণা ||
শ্রীহরি নারায়ণ ভাবিয়া এক চিতে |
মনসার চরণে গীত রচিল বিজয় গুপ্তে ||
মনসামঙ্গল কাব্য তুলি মিলনসাগরে |
বঙ্গীয় সাম্রাজ্য-জাল বাড়ে সবিস্তারে ||
. ****************
. সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা ১
ওলো শুন আদ্যের কাহিনী | মুই হেন সেবকে তোমার শরণ লইলাম গো
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
৩
বন্দিলাম বন্দিলাম মাগো যন্ত্রে দিয়া ঘা |
অবধান কর মাগো জগৎ গৌরী মা ||
হংস বাহনে বন্দম দেবী পদ্মাবতী |
অষ্টনাগ সহিত মা এস শীঘ্র গতি ||
দুই হংস দুই দিকে মধ্যে অজগর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৪
শ্রাবণ মাসের রবিবারে মনসা পঞ্চমী |
দ্বিতীয় প্রহর রাত্রি নিদ্রা যায় স্বামী ||
নিদ্রায় ব্যাকুল লোক না জাগে একজন |
হেনকালে বিজয় গুপ্ত দেখিল স্বপন ||
গৌরবর্ণ শরীর এক ব্রাহ্মণের নারী |
রত্নময় অলঙ্কার দিব্য বস্ত্রধারী ||
তপ্ত কাঞ্চন য়েন শরীরের জ্যোতি |
ইন্দ্রের শচী কিম্বা মদনের রতি ||
চাচর মাথার কেশ জিনিয়া চামর |
সর্বাঙ্গেতে বেড়িয়াছে সর্প অজগর ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৫
পূর্বে বারানসী রাজা ছিল দিবদাস |
তারে ঘুচাইয়া শিব তথায় করে বাস ||
পৃথিবী দুর্লভ স্থান নেই কাশীপুর |
তথায় বসতি করেন সৃষ্টির ঠাকুর ||
ভূমি অন্তরীক্ষ পুরী যক্ষগণে রাখে |
দেবগণ লইয়া শিব নিত্য তথা থাকে ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ৬
দেখিয়া পুষ্পের বনে আনন্দিত ত্রিলোচন
. সুললিত গন্ধে মনোহর |
সরস বসন্ত কালে বিকশিত ডালে ডালে
. মধু লোভে গুঞ্জরে ভ্রমর ||
চাপা নাগেশ্বর জাতি লবঙ্গ মালতী যুথি
. কেওয়া কস্তুরী কুরুবক |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১০
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১২
ভাল ভান্ডিলা শিব পলাইয়া গেলা দূর |
এবার লাগল পাইলে দপ্প করিতাম চুর ||
আঁচলে আঁচল বান্ধি শুইলাম এক ঠাঁই |
তবুত রাখিতে নারিলাম পাগল শিবাই ||
কপট চরিত্র দেখি খলের সঙ্গে সঙ্গ |
যাবার কালে লাগ পাইলে দেখিতাম রঙ্গ ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসার জন্ম পালা
. ১৭
( কার্য বুঝিয়া দেবী চিন্তে মনে মনে |
মায়াপতি ঘর তোলাইল সেই বনে || )
সাচা মিছা কথা কহি করে কানাকানী |
শিব লইয়া সেই ঘরে চলিল ডোমনী ||
নানা দ্রব্যে পরিপূর্ণ সেই গৃহবাস |
হেনরূপ সজ্জা হইল চন্ডীর আবাস ||
মদনে মোহিত শিব নাচে কুকূহলে |
শূন্য ঘরে চন্ডীরে ধরিতে চাহে বলে ||
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|