রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
আগু আসি কর্পূর কহিবে সমাচার | দেউল জাঙ্গাল দেখি নানা অবতার || কর্পূর বলেন তুমি আমা হইতে বড় | ধর্মের চরণে দাদা তোর মন দড় || কেবা ধরে তোমার সমান বুদ্ধি বল | কাননে বধিলে তুমি বাঘ কামদল || কুম্ভীর করিলে বধ তারাদীঘির জলে | থানা ঘাট মোকাম করিলে তরুতলে || এ দেশের কাব্য দাদা আমি সব জানি | কয়্যা দিতে পারি ভূত ভবিষ্যত বাণী || বলিতে বলিতে কর্পূর লম্ফ দিয়া উঠে | বদনে ভারতী বলে যেন খই ফুটে || বচন বলিতে মুখে বৈসে সরস্বতী | কহিব এহার কথা কর অবগতি || জামতি নগর দাদা অই দেখ চায়্যা | সর্বকালে সতন্তর এ দেশের মায়া || ষোলশ বারুই এদেশে করে ঘর | সভাকার প্রধান প্রবীণ হরিহর || কুবের সমান ধনী পূণ্যশীল দাতা | সর্বদেশ হইতে এদেশে কৃষ্ণকথা || সুবর্ণের ঝারিতে সভাই জল খায় | কলধৌত পাত্র কত গড়াগড়ি যায় || বিশেষে এদেশে দাদা ডাকা চুরি নাই | ধরণীর উত্তম ধরণী এই ঠাঁই || বার মাস বসন্ত বাতাস এথা বয় | অগস্ত্য মুনির বাক্য মিথ্য কভু নয় || অকাল মরণ নাই দুঃখ শোক জরা | সবে দোষ এ দেশে যুবতী সতম্তরা || দাদা হে | এদেশে বনিতা নহে পুরুষের বশ | যার তার সঙ্গে কথা মনের সরস || স্বর্গ বিদ্যাধরী কিবা সিংহল পদ্মিনী | দরশন ধৈরজ ধরিতে নারে মুনি || বচনে পীযুষ মাখা মুনি মোহ যায় | তোমারে দেখিলে পাছে কড়চে লুকায় || চাঁপাফুল বলিয়া শ্রবণে পাছে পরে | এ দেশ ছাড়িল যতী অসতীর ডরে || কদাচিত এই দেশে দুই এক সতী | অপরঞ্চ এদেশে মজিল যত যতী || না যাব না যাব দাদা এ পথ দিয়া | পশ্চিমের পথে যাব জামতি রাখিয়া || এ পথে গৌড় গেলে বড় দুঃখ পাব | দুইভাই আনন্দে বামের পথে যাব || এখনি আসিব জায়া দিব তাড়াতাড়ি | সাক্ষাতে সর্বদা যেন সূর্পনখা রাঁড়ী || বেশভূষা দেখিয়া মুনির মন ভোলে | মনুষ্যার মন বান্ধে মরকন্দ বোলে || এ পথে গৌড় গেলে অবশ্য বিপাক | ছোট ভাই কর্পূর এহার কথা রাখ || কর্পূর বিনয় বলে মনে সচঞ্চল | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের মঙ্গল || লাউসেন বলে শুন কর্পূর পাতর | অবশ্য দেখিয়া যাব জামতি নগর || অবনীর সার বলে উত্তম জামতি | মহাজন পন্ডিত নিবসে যতী সতী || ব্রহ্মচারী নিবসে কুলীন কবিরাজ | এক অনুভাব নহে সভাকার কাজ || ভাল মন্দ কর্পূর সকল গ্রামে আছে | কত কত কাঞ্চন মিশাল হয় কাচে || কাচে আছে কাঞ্চন কাঞ্চনে আছে কালি | কুমতি সুমতী সব সেই বনমালী || চল ভাই কর্পূর জামতি দেখ্যা যাব | পন্ডিত এহার লোক মনে প্রীত পাব || আজি নিশি বঞ্চিব এহাতে দুই ভাই | কালি কিম্বা পরশ্ব গৌড় চল যাই || আস্য আস্য কর্পূর আমার কাছে কাছে | মহামণি শিখরে মিশাল হয় পাছে || খাতি দিব এখনি সন্দেশ চিড়া মুড়ি | এক দন্ড কর্পূর আসিবে রড়ারড়ি || আকাশে চাহিয়া দেখ বেলা অবশেষ | সমুখ রজনী গুরু যাব কোন দেশ || আজি সুখে রজনী বঞ্চিব তরুতলা | ভৈরবী পারাব কালি ঠিক দুফুর বেলা || সন্নিকট জামতি বিস্তর দূর নয় | আস্য ভাই কর্পূর তোমার কিবা ভয় || জামতির জায়াকে সঙ্কোচ মনে কি | ভুলাতে নারিল মোরে হেমন্তের ঝি || এত শুনি কর্পূরের অঙ্গে হৈল বল | তুরিত পয়ান পাছু হাথে গঙ্গাজল || ফলা ঝারি হাথে ধরি পাছু পাছু ধায় | লাউসেন কর্পূর জামতি গ্রাম পায় || নগর দক্ষিণে আছে রম্য সরোবর | ঘাটে শোভা কব়্যাছে কদম্ব তরুবর || মন্দাকিনী সমান পীযুষতুল্য জল | শোভা করে কমুদ কমল শতদল || জল দেখি দুভাই বসিল তরুতলে | জোড় হাথে কর্পূর পাতর কিছু বলে || চল শীঘ্রগতি ভাই এ দেশ হইতে | মজিল বিস্তর মুনি এই সরণিতে || এখনি আসিব জলে জামতির জায়া | অম্বরীষ বুঝিতে নারিল সেই মায়া || এই ঘাটে জলে আইসে যতেক সুন্দরী | বিশেষ লাবণ্য করে নানান চাতুরী || এখনি আসিব জলে যতেক যুবতী | ঊর্বশী সমান রূপ কিবা অরুন্ধতী || কমলে খঞ্জন ঘোরে না দেখে নয়নে | মহামুনি ধৈরজ না দরে দরশনে || এত বলি কর্পূর রাখিল ঝালি ফলা | লাউসেনের রূপে আল কদম্বের তলা || একা কর্পূরের রূপে দশদিশ আল | দরশনে সংসারে সভাই বলে ভাল || তরুতলে লাউসেন করিল মোকাম | প্রমাণ করিতে পারি অযোধ্যার রাম || পশুপক্ষ রহিল বদন পানে চ্যায়া | জল নিতে আল্য যত বারুই-র মায়্যা || সুবর্ণ কলসী কাখে সারি সারি যান | . ****************** . জামতিপালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |