রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
বার ভূঞা রহিল তাহার মুখ চায়্যা | আশ্বাস করিল রাজা হাতে পান দিয়া || বার ভূঞা সংহতি সমরে দিব হানা | বলবন্ত ইছাই জানিব বীরপনা || দড়বড়ি এখনি সাজিব দলবল | পার হয়্যা যাব নদী অজয়ার জল || মসীবর্ণ বদন অরুণবর্ণ আঁখি | ঢেকুর ঐরিষ্টী হৈল ভাল নহে দেখি || জ্বলন্ত পাবক নিবারণ ভাল নয় | সমূখে বসিয়া পাত্র মহামদ কয় || অতিশয় ক্রোধ হৈলে অকার্য্য অনেক | রাজা হৈল গোয়ালা দেবতা পরতেক || না করিহ ক্রোধ রাজা ধরি তব পায় | সন্নিধানে মহাপাত্র আপনে বুঝায় || পাঠাইয়া দিব আগে ভাট গঙ্গাধর | পরোয়ানা লিখিব সোমঘোষ বরাবর || তবে যদি বেবাক পাঠায় ইরসাল | তবে যদি অবশ্য এ সব ঠাকুরাল || কদাচিত বেবাক না দেয় রাজকর | উভুদলে সাঁজে যাব তাহার উপর || এত বলি পরোয়ানা লিখিল শীঘ্রগতি | ভাটকে বলিল চল ঢেকুর বসতি || এহাতে বিলম্ব নাঞী এক দন্ড সয় | অজয় ঢেকুরে কর এখনি বিজয় || সোমঘোষে বলিবে বিশেষ বিবরণ | পালকি চড়িয়া ভাট করিল গমন || বারজন মহলা ( ? ) পালকিখান ধরে | আনন্দে করিএ যাত্রা অজয় নগরে || পার হয়্যা ভৈরবী ভবানীপুর পায় | অজয় ঢেকুর ভাট গঙ্গাধর যায় || পাঁচদিন ঢেকুর নগরে গতায়ত | সত্বরে ঢেকুর পাল্য গুয়ালা সাক্ষাত || সোমঘোষ গুয়ালা দরবারে বসিয়াছে | হেন বেলা রাজার পরোয়ানা দিল কাছে || তিনবার প্রণাম পরোয়ানা দেখি কৈল | মোহর ভাঙ্গিয়া পত্র দরবারে পড়িল || যথাযোগ্য পরোয়ানা লিখেচে সর্ব্বজন | ইরসাল বেবাক কড়ি দিবে ততক্ষণ || পরোয়ানা পড়িয়া সোমঘোষ কয় | ইরসাল বেবাক কর দিব মহাশয় || হিসাব করিল সর্ব্ব ঢেকুরের কর | সোমঘোষ আনি দিল ভাট বরাবর || ভাটকে ইনাম দিল দিব্য অলঙ্কার | বিদায় হইল ভাট তাহার দরবার || আরোহণ করে পুনু পালকি উপরে | বারবেলা যাত্রা করে গৌড় সহরে || আগুপাছু শিঙ্গা পড়ে টমক নিশান | গৌড়-পদ্ধতি মুখে করিল পয়ান || অজয় নদীর কূলে দরশন দিল | লোহাটা বর্জ্জর বীর ইছাই দেখিল || ইছাই বলেন শুন লোহাটা বর্জ্জর | কোন বেটা যায় পথে পালকি উপর || গড়ে হৈতে যায় কে কাড়ায় কাটী দিয়া | লোহাটা তাহার কাছে উত্তরিল গিয়া || মহাজন দেখি বীর করিল প্রণাম | বলিবে আমার আগে বাড়ী কোন গ্রাম || তুমি কাহার চাকর তোমার নাম কি | মুখে বাক্য নাহি সরে পাবকে যেন ঘি || এতেক শুনিয়া বলে ভাট গঙ্গাধর | গৌড় সহরে বাড়ি রাজার চাকর || হিসাব করিয়া কর সোমঘোষ দিল | রাজ-দরবারে যাই তোমারে বলিল || লোহাটা বর্জ্জর বলে ইছাএর পায় | অকালে আগুন যেন পেল্যা দিল গায় || কেবা আছে এমন সংসারে বল ধরে | অধিকার আমার উপরে কেবা করে || এদেশে আসিলে নাঞী বিধাতার সাধ | যমরাজা না করে আমার সনে বাদ || কোন বেটা নিতে পারে ঢেকুরের কর | দিগারে হুকুম দিল ইছাই সুন্দর || অনাদ্যের মায়া কহে নাঞী যায় | অনাদ্যমঙ্গল দ্বিজ রূপরাম গায় || দড় পায়্যা হুকুম দিগার সভে ধরে | ইলিক পয়জার মারে ভাট গঙ্গাধরে || আশে পাশে মারে কেহ বন্দুকের ছড়া || রতিমাষা হইল গাএর জামাজোড়া || বলিতে কহিতে [ তবে ] বাড়ে অনুরাগ | মাথা মুড়াইয়া দিয়া নরুণের দাগ || বাম গালে কালি দিল ডানি গালে চুন | ভাট বলে খাব আমি করিয়া বেরূন || একনাথ্যা করে তারে নগর চাতরে | বানুরে বানর যেন নাচায় ঘরে ঘরে || নগরে নগরে বুলে বাজারে বাজার | সোমঘোষ তখন পাইল সমাচার || শীঘ্রগতি দেখিল ভাটের অপমান | কহিবারে লাগিল ইছাই সন্নিধান || ব্রহ্মচারী বৈষ্ণব বসিব নাঞী দেশে | সদাই ইহার হিংসা রজনী দিবসে || পূর্ব্বকালে আমি যখন গৌড়ে নিবাসী | ভাট গঙ্গাধর ছিল আমার পড়সি || এহারে ইনাম দেহ চড়নের ঘোড়া | মাথায় পাগড়ি দেয় গায় জামাজোড়া || পরুস্কার পায়্যা ভাট হইল বিদায় | গৌড়-দরবারে আসি তবে জয় খায় || ভাট বলে শুন রাজা বিপদ-বারতা | দশমুখ হইলে কই ইছাএর কথা || ইন্দ্রের সম্পত্তি দেখি ইছাএর বাসে | লক্ষ্মীদেবী আপুনি বাহিরে বসিয়াছে || যমরাজা বরুণ পবন আজ্ঞাকারী | বিধাতা আপুনি তার বস্যাছে দুয়ারি || সোমঘোষ বেবাক গণিয়া দিল কর | মাঝপথে কাড়্যা নিল ইছাই কুঙর || মাথা মুড়াইয়া মুখে দিল চুনকালি | কুলোক ( ? ) বলিয়া কত দিল গালাগালি || পার হয়্যা অজয় ঢেকুরে দিল হানা | কালি কিম্বা পরশু গৌড়ে দিব হানা || নিবেদিল ভাট যদি রাজার সমাজ | আপুনি রুষিল রাজা বলে সাজ সাজ || দড়মাসা দামামা দগড়ে পড়ে কাটি | বাইশ হাত কাঁপে গেল গোউড়ের মাটি || সাজ সাজ শবদে সঘনে পড়ে সাড়া | কত ঠাঞী শিঙ্গা বাজে কত ঠাঞী কাড়া || ধর্ম্মের মায়া কহনে নাঞী যায় | হরি হরি বল সভে ধর্ম্মের সভায় || আদ্য ঢেকুর পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |