রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
রাখাল মন্ডলী কব়্যা কদম্বের তলে | মুনি অন্ন খায় সভে মহা কুতুহলে || প্রথমে দিলেন অন্ন কানাই বদনে | অবশেষে সে প্রসাদ পাইল প্রতিজনে || কৃষ্ণকথা সুরীক্ষা শুনিল একচিতে | হেনকালে ভাজনবুড়ী আইল আচম্বিতে || লাউসেন কর্পূরের ঠাঁই পায়্যা অপমান | জোড়হাথে আদ্দাস সুরীক্ষা বিদ্যমান || শুন গো সুরীক্ষা দিদি আমার আদ্দাস | অতদিনে হৈল তোমার পূর্ণ অভিলাষ || গোলাহাটে আইল দুই রূপের নাগর | তার পাকে ধাত্তাধাই তোমার গোচর || ছকুড়ি নাগরে তোর দুটি নাই আটে | বিধাতা আনিয়া দিল তোমার নিকটে || ছকুড়ি নাগর পূর্ণ হৈল এতদিনে | এত শুনি সুরীক্ষা আনন্দ বড় মনে || মনে হৈল ভুলাইব গুয়াপড়া দিয়া | পানপড়া খাওয়াইলে দেশে যাবে রয়্যা || অনাদ্যের পদরেণু করিয়া বিয়ান | শ্রীধর্মমঙ্গল দ্বিজ রূপরাম গান || ভাজনবুড়ী কহিল নাগর সমাচার | শুনি উল্লসিত হৈল সুরীক্ষা দরবার || সনকা গুরীক্ষা শুন আমার বচন | পানের পসরা দাসী লহ দুইজন || গুয়া পান পড়্যা নটী সাজাইল বিড়্যা | যাইতে নারিব দেশে গোলাহাট ছাড়্যা || একবার এ পান কিনিয়া যদি খায় | ছাগলের প্রায় হয়্যা দেশে বয়্যা যায় || এত শুনি না সয় কথার বিলম্বন | দুই দাসী পরিল অমূল্য আভরণ || পানের পসরা দাসী করিল মাথায় | কুঞ্জর সমান গতি চলে পায় পায় || রাজপথে সরণে দিলেক দরশন | নাপান করিয়া দাসী উত্তরে তখন || পথে রাখ্যা পসরা বসিল দুই দাসী | অশেষ চাতুরী কলা কতখানি হাসি || কিন্নর সমান বেশ সুমধুর বাণী | মদন মোহিত তার দেখিয়া চাহনি || পয়োধরে কাঁচলি পব়্যাছে কত ছান্দে | মদন মোহিত রূপে বাহু কত কান্দে || পানের পসরা দাসী রাজপথে থুয়্যা | ষোল কলা পূর্ণ শশী পড়িছে ঢলিয়া || সনকা গুরীক্ষা পথে থাকে দুইজন | মালিঘরে বিদায় মাগিল তপোধন || কর্পূর বলেন দাদা শুন মন দিয়া | কখন গৌড় দেশ যাইবে সাজিয়া || মামা মেস্বা দেখিলে সন্তোষ বড় মন | তিনদিন মাসীর মন্দিরে বিলম্বন || মালিনী মাসীর গুণ কি দিয়া শুধিব | মনে হয়. মাসীকে কি ধন দিয়া যাব || এত বলি দুইভাই করে কানাকানি | চঞ্চল দেখিয়া মন কান্দেন মালিনী || লাউসেন কর্পূরে করেন জিজ্ঞাসন | হেত্যার অম্বর বান্ধ্যা কোথাকে গমন || এত শুনি আগু হয়্যা বলে দুইভাই | বৈশ মাসী গোউড় বিদায় হয়্যা যাই || অরুণ উদয়কালে করিল সাজনি | চিত্রলেখা হয়্যা পথে কান্দেন মালিনী || যুগল লোচনে বহে জাহ্নবীর ধার | মালিঘর পাছু করে লাউসেনকুমার || লোকে বলে সুজন জগতে বলে ভাল | লাউসেনের রূপে গোলাহাট হল্য আল || পথের পথিক যত রূপ দেখে চায়্যা | মনকলা খায় যত গোলাহাটের মেয়্যা || আগু যান লাউসেন কর্পূর পাছুয়ান | ডানি হাথে জলের ঝারি কান্ধে ফলাখান || পাছু পাছু কর্পূর চলিল ধাই দিয়া | সুমিত্রানন্দন যেন রাম গুড়াইয়া || পথে যাত্যে দুভাই সদত কোলাকুলি | দুই ভাই পরিল বনের ফুল তুলি || সুরীক্ষার মোকাম রাখিয়া যায় দূর | রাজপথে উপনীত ময়নার ঠাকুর || যেইখানে সুরীক্ষার পানের পসরা | সেই পথে গোউড় গমন খরতরা || হেনকালে লাউসেন পথে দেখে পান | কর্পূর পাতরে বলে অনুহিত জ্ঞান || অনাদ্যার পদরেণু ভরসা কেবল | দ্বিজ রূপরাম গান অনাদ্যমঙ্গল || লাউসেন বলে শুন কর্পূর পাতর | পান খাওাইয়া ভাই প্রাণ রক্ষা কর || বিষম রবির তাপে শুখাইল হিয়া | বাড়িল আমার ইচ্ছা এ পান দেখিয়া || মূল্য দিয়া দশ বিড়্যা পান কিন্যা দেও | ফুলমালা চন্দন যতনে কিন্যা নেও || এত শুনি কর্পূর করেন হায় হায় | পান হেতু লাউসেনে অশেষ বুঝায় || নির্বুদ্ধি হইলে কেন লাউসেন ভাই | পান খাইলে বাম হব শ্রীধর্ম গোসাই || পানেতে ওষধ মাখা চুনে দশগুণ | ঊর্বশীর প্রেমরসে মজিল অর্জুন || ধর্মের তপসী তুমি হেন বুদ্ধি কেনে | মহিমান রাজা নষ্ট শুন্যাছি পুরাণে || শিশুকাল হৈতে দেখি ধর্মপথে মন | এ পান খাইলে হব আমিষ্য ভোজন || অকারণে নৈষধ পড়িলে মেঘমালা | বর্ণ বিচার ভাব লাউসেন বালা || পুন পুন লাউসেন কর্পূর তরে কয় | এই পান খাইলে সমরে হব জয় || এত শুনি কর্পূর করিল হেঁট মাথা | পঞ্চমীর দিনে শশী হইল মহীলতা || কান্দ্যা কান্দ্যা কর্পূর অশেষ কথা কয় | আমি যত বলি কথা মনে নাই লয় || এই পান পরশ করিলে সর্বনাশ | ধর্মপূজা নাই হব অবনী প্রকাশ || ধর্ম বলি কেহ নাই জানিব সংসার | তিন যুগ বই হৈল কি করিব আর || . ****************** . গোলাহাট পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |