রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
পরিসর সুন্দর পূজার হৈল স্থল | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের মঙ্গল || জয়ধ্বনি শঙ্খধ্বনি হাকন্ড ভুবনে | সন্ন্যাসী ভকিতা নাচে হরযিত মনে || ঢাকে কাঠি দিলেক বাইতি হরিহর | বেত হাতে নাচেন দুর্লভ সদাগর || আইস রে ভকিত্যা ভাই হাকন্ড সিনাব | জ্ঞান অজ্ঞানের পাপ তীর্থে খন্ডাইব || হাসিতে নাচিতে সভে করিল গমন | হাকন্ড নদীর ঘাটে দিল দরশন || তিনবার কুশজলে করিল বন্দনা | জল পরশিতে হৈল পাবকের সোনা || পূর্বমুখে সন্ন্যাসী ভকিতা করে স্নান | এক ডুবে যতী হৈল পতঙ্গ সমান || তর্পণ করিল জলে ময়নার রাজা | শুভক্ষণে আরম্ভ করিল ধর্মপূজা || পুথি হাতে সমুখে পন্ডিত পুরোহিত | ভকিতা পূজায় বৈসে মন হরষিত || পূজার সমুখে বৈসে সামুলা আমিনি | আদ্যপূজা আরম্ভিল পূর্বের কাহিনী || পূজার আরম্ভ হৈল নানা উপহার | আতব তন্ডুল চিনি বিশাশয় ভার || চাঁপাকলা খন্ড চিনি কাঁচদুগ্ধ রচনা | পাঁচ ভাজা পরিপাটি পীযুষ তুলনা || ধর্মপূজা লাউসেন করে দিবানিশি | দিন প্রতি দশ লক্ষ গণিয়া তুলসী || আশী মণ ধুনা পুড়ে অঙ্গের উপর | তবু দয়া না করে দিনের দিবাকর || সন্ন্যাসী ভকিতা পূজা করে চারিপানে | অর্ঘ্য হাতে লাউসেন বলে বিদ্যমানে || অহে ধর্মঠাকুর দিনের দিবাকর | বিনয় করিয়া মাগি পশ্চিমউদয় বর || অবোধ ভূপতি পাত্র যুক্তি নাঞি বুঝে | মামার বচনে মাস্বা পশ্চিমউদয় খুঁজে || তুলবন্দী গৌড়ে জননী জন্মদাতা | অকারণে এত দুঃখ দিলেক বিধাতা || ছোট ভাই কর্পুর মায়ের সেবা করে | আমি আদ্যপূজা দিব অস্তগিরিতীরে || তিন যাম পশ্চিমউদয় দিবে করতার | জনক জননী তবে গৌড়ে উদ্ধার || ভকতবত্সল তুমি ভকতের পতি | পুরাণে শুনিলুঁ তুমি পান্ডব-সারথি || কেহ বলে পান্ডব পুড়িল জৌঘরে | সে সব ধর্মের মায়া কে বুঝিতে পারে || পরিত্রাণ প্রভুতায় করিলে আপনি | ভকতবত্সল তুমি সব ঠাঞি শুনি || মহিমা শুনিলুঁ বড় গজেন্দ্রমোক্ষণে | অর্জুনের সখা তুমি বিদিত ভুবনে || তুমি দয়া করিলে সকল ঠাঞি জয় | সবে দিবে বার দন্ড পশ্চিম উদয় || এত বলি কান্দেন সূর্যের রথ চায়্যা | বারটি ভকিতা কান্দে জোড়হাথ হয়্যা || মাথায় পুড়িছে ধুনা ইছারাণা হাড়ি | ধর্মজয় বলি বেটা যায় গড়াগড়ি || কাজলবরণ বাট্বা লুটে দুই কান | গলায় রুদ্রাক্ষ মালা ধর্মকে ধিয়ান || সব গাএ চন্দন নিয়ম নিরাহার | তরণি-বদনে বলে কোথা করতার || পূর্বমুখে সন্ন্যাসী ভকিতা অর্ঘ্য দেই | চাঁপাকলা কাঁচদুগ্ধ জবা যুথী লেই || অর্ঘ্য দিল লাউসেন ধর্মের চরণে | জয়ধ্বনি শঙ্খধ্বনি হাকন্ড ভুবনে || এক অর্ঘ্য দিলেন দুর্লভ সদাগর | গোউড়ে পাত্রের মুন্ডে পড়িল বজ্জর || এইরূপে লাউসেন ধর্মের দিল পূজা | বার দিয়া গোউড়ে বস্যাছে মহারাজা || বারভূঞা সংহতি বস্যাছে গৌড়েশ্বর | ষোল পাত্র বস্যাছে রাজার বরাবর || বাহাত্তর মন্ডল শোভিছে সারি সারি | ভূপাল মান্ধাতা কত কালদন্ডধারী || কুলীন পন্ডিত কবি সভে বিদ্যমান | রাজার সমুখে কেহ পড়িছে পুরাণ || সভাজন কান্দে শুনি বকাসুর বধ | মনে অনুমান করে পাত্র মহামদ || পশ্চিমউদয় দিতে গেল লাউসেনভাগিনা | বিনাশ করিব তার দক্ষিণ ময়না || কলিঙ্গা কানড়া দিব হাসন হুসনে | নব লক্ষ সৈন্য লব ময়না ভুবনে || স্বর্ণপুরী ময়না করিব ছারখার | উভদলে অবশ্য কালিনী হব পার || রঞ্জাবতী কর্ণসেন গৌড় কারাগারে | বীর কালু লখ্যা আর কি করিতে পারে || নতুবা কালুর সঙ্গে করিব পিরিত | ইনাম করিব তারে কুল পুরোহিত || মহল ধোয়াব তার না রাখিব দিশা | কালুকে বলিব তায় বুনিতে সরিসা || এই সব যুকতি চিন্তিল মনে মন | জোড়হাতে রাজার চরণে নিবেদন || তুমি রাজা আমি পাত্র বঙ্গের উপর | নিবেদন বিশেষ তোমার বরাবর || পশ্চিমউদয় দিতে গেল লাউসেনভাগিনা | আচম্বিতে গন্ডা আসি বেড়িল ময়না || দিবা দ্বিপ্রহরে গন্ডা উখাড়য়ে মাটি | তিন সন্ধ্যা ময়নার নাঞি ছড়া-ঝাটি || তামলি পালায় গুয়া করে হুড়মুড় | মোদক পালায়্য যায় পেলি তার গুড় || কাএস্ত পালায় পেলি কাগজের গড়া | ব্রাহ্মণ সকল হৈল চারিবেদ ছাড়া || . ****************** . জাগরণ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |