রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
এত শুনি গৌড়েশ্বর হরষিত মন | লাউসেনে বকশিস করিল নানা ধন || রাজা বলে কর্পূরধল শুন মন দিয়া | কাঙুরের কর দেহ হিসাব করিয়া || অনেক দিবস তুমি রাজা সতন্তর | দশবার হানা দিল গোউড় ঈশ্বর || কত দুঃখ মরমে করিল নিবারণ | পরিণাম মনে নাঞি করে মুর্খ জন || ইন্দ্রের নিধন আছে অন্য জন কে | হিসাব করিয়া কর কাঙুরের দে || কেবা নাহি কর দিয়া ঠাকুরাল করে | তোমা পারা এমন যোগ্যতা কেবা ধরে || বারভূঞা চৌদিগে কর্পূরধল মাঝে | বদনে বচন নাই পরাভব লাজে || হেনবেলা লাউসেন করে নিবেদন | দ্বিজ রূপরাম গান দৈমন্তীনন্দন || লাউসেন বলে তবে বচন সরস | কোন ছার বচনে ক্রোধের কেনি বশ || বার বত্সরের কর হিসাব করিল | সমুখে বেবাক কর কর্পূরধল দিল || বকশিস করিল রাজা গায়ের কাপড় | পরিতোষ হয়্যা গেল কাঙুরের গড় || লাউসেন বিদায় হৈল ময়না নগরে | পাত্র মহামদ তবে মনে যুক্তি করে || কপাল হইলে মন্দ সর্ব ঠাঞি ডেড়ি | কবে আর রঞ্জাকে করিব আঁটকুড়ি || দুরন্ত মহিম গেল মরিবার তরে | বিবাহ করিয়া বেটা বাহড়িল ঘরে|| এত অনুমান করে গৌড়ের নাবড় | বিদায় হইল সেন ময়নানগর || তের দলুই আগু পাছু তুরিত গমন | বাজিবর-বিমানে করিল আরোহণ || বনিতা সহিত শীঘ্র করিল পয়ান | চারিদিগে শিঙ্গা কাড়া দামামা নিশান || নয়ান ভরিয়া পথে দেখে চন্দ্রচূড় | বড় গঙ্গা পার হৈল পশ্চাত গোউড় || বালিঘাটা শীতলপুর পশ্চাত করিয়া | তারাদীঘি লাউসেন উত্তরিল গিয়া || পাইল মঙ্গলকোট দ্বিতীয় প্রহর | গজপতি মহারাজা জানিল সত্বর || লাউসেন আমি শীঘ্র করিল সম্মান | অমলা নামেতে কন্যা সেনে দিল দান || পুরস্কার করিল অনেক ধন দিয়া | লাউসেন চলিল ঘর বিদায় হইয়া || দিবস যামিনী বেগে সত্বর পয়ান | বই হৈল কর্জনা পাইল বর্ধমান || বর্ধমানে মহারাজা নাম কালিদাস | লাউসেনে সমাদরে আনিল নিবাস || ঘোড়া হাথি দিল কত কত চিন্তামণি | বিমলা দুহিতা দান দিলেন আপনি || এক নিশি কৌতুকে বঞ্চিল বর্ধমানে | ময়না করিল যাত্রা প্রত্যুষ বিহানে || দামোদর পার হয়্যা করিল গমন | অশ্ব আগে কালুবীর সাক্ষাত পবন || ঠাঞি ঠাঞি নিশান দামামা ঘন পড়ে | আমিলা মগলমারি উচালন এড়ে || রাঙ্গামেট্যা পাছু করি পাইল মান্দারণ | তবে পাইল পদুমা ময়না দরশন || কালিনী গঙ্গার জল নাএ পার হয়্যা | ময়নানগরে সেন উত্তরিল গিয়া || জোড়াশিঙ্গা সারে কালু হাঁকে রণ কাড়া | কাঙুর হইল জয় দেশে উঠে সাড়া || লাউসেন দেখিতে আইল ময়নার লোক | দরশনে প্রজা সভ পাসরিল শোক || পুলকে পূর্ণিত রাজ্য ময়না বসতি | অন্তঃপুরে বারতা পাইল রঞ্জাবতী || ধাওাধাই রঞ্জাবতী চলিল তখনি | হেনকালে আইল ময়নার গুণমণি || তিন কন্যা সঙ্গে সেন দন্ডবত করে | পুত্রবধূ রঞ্জাবতী নিল নিজ ঘরে || বড় রাণী কলিঙ্গা সাক্ষাত অরূন্ধতী | যার রূপে আল হৈল রাজার বসতি || অমল বিমলা যেন সিংহল পদ্মিনী | কত ধন রঞ্জাবতী করিল নিছনি || ময়নার বুড়া রাজা দেখে পুত্রমুখ | কর্ণসেন বুড়া রাজা দেখে পুত্রমুখ || বিদায় হইয়া কালু গেল নিজ ঘর | তবলে বান্ধিল ঘোড়া অন্ডির পাখর || বড় সুখ সংসারে আনন্দ বড় মনে | নিজ দেশে আনন্দে রহিলা লাউসেনে || রাজা গৌড়েশ্বর লয়্যা শুনহ উত্তর | দ্বিজ রূপরাম গান শ্রীরামপুরে ঘর || বার দিয়া বস্যাছে পঞ্চম গৌড়েশ্বর | বারভূঞা বস্যাছে রাজার বরাবর || যোল পাত্র সমুখে পন্ডিত বিচক্ষণ | চারিদিগে দলবল যম-দরশন || সমুখে বসিয়া আছে পাত্র মহামদ | কৌতুকে শুনেন রাজা বকাসুরবধ || মায়ারূপে বকাসুর বঞ্চিল গহনে | যথা হরি অবতার দৈবকীনন্দনে || . ****************** . লৌহগণ্ডার পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |