রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
পথে ঘাটে গোউড়ে পড়িল কানাকানি | প্রতি ঘরে বনিতা বালকে জানাজানি || হেনবেলা মহামদ গৌড়ের পাতর | দরবার হইতে তিহ যান নিজ ঘর || সরস কাঞ্চন কানে জ্বলে ধিকিধিকি | সমুখে বেহারা আস্যা যোগায় পালকি || শীঘ্রগতি আরোহিল পালকি-উপর | বাজারে বাজারে যায় শহরে শহর || শিঙ্গা কড়া সদাই সত্বর ধাত্তাধালি | শতেক পদাতি সঙ্গে আগু পাছু ঢালী || সাত বাঁকে সত্বর শহর হৈল ছাড়া | বাহির রাজার বামে কামিলার পাড়া || কামিলার ঘরে তখন লাউসেন বালা | দক্ষিণে কর্পূর ভাই রূপে গুণে আলা || কেহ যেন ধায়্যাছে দেখিতে জগন্নাথ | কামারের বাড়ীতে লাগ্যাছে মহাযাত || রূপ দেখ্যা সংসার বাখানে দশমুখে | পালকি উপরে বস্যা মহাপাত্র দেখে || হেঁটমুখে আছিল উপর মুখে চায় | লাউসেনের ফলাখান দেখিবারে পায় || অপূর্ব গঠন ফলা দেখি বিপরীত | পালকি রাখিতে পাত্র করিল ইঙ্গিত || এত শুনি পালকি রাখিল মাঝপথে | পদব্রজে চল্যা যায় লাউসেন দেখিতে || যোগাইল চরণে উত্তম মখমল | সেবকেতে ঢুলায় চামর গঙ্গাজল || ধীরে ধীরে মহাপথ করিল গমন | লাউসেনের সমুখে দিলেক দরশন || দুই ভাই দেখিল দেবতা সমতুল | গলায় গরুড়মণি যার নাঞি মূল || তার পাছে দক্ষিণে ফলার পানে চায় | অপূর্ব গঠন দেখি নানা চিত্র তায় || চায়্যা দেখে জয়মুনি হরণ ভাগবত | মূর্তিমান কাব্যশাস্ত্র দেবতার রথ || রাজ্যের ঈশ্বর পাত্র বুদ্ধি বিচক্ষণ | দেখিতে দেখিতে বহে নয়নে কিরণ || পঞ্চভাই পান্ডব যখন জউঘরে | পারিজাত মালা গলে পালঙ্ক উপরে || মহাসুখে অর্জুন সহিত ভীমসেন | যুধিষ্ঠিরে বিদুর বিরলে তত্ত্ব দেন || পলাইয়া যাহ বাপু পাতালের পথে | যমুনায় তরণী রাখিব ভালমতে || জোউঘর হইতে পালাহ এইক্ষণে | জোউঘরে আগুন দিবেক পুরোচনে || একদন্ড এখানে না রহ যুধিষ্ঠির | এইক্ষণে পালাহ পান্ডব পঞ্চবীর || জোউঘরে নিমিষে পশিল হুতাসন | পালাইল বিদুর বিপদে পায়্যা গন || পালাইল পান্ডুপুত্র জীবন লইয়া | জোউঘরে পুরোচন মরিল পুড়িয়া || সারি সারি চায়্যা দেখে এ সব লিখন | কৃষ্ণ অবতার দেখে শ্রীকুঞ্জকানন || একু ঠাঁই লিখন গোকুল বৃন্দাবন | বত্সক হরণ দেখে গিরি গোবর্ধন || রাধাকানু একুঠাঁই গোপিনী সকল | মধুবন দেখিল আনন্দ নিরমল || অবলীলা কৃষ্ণের দেখিল মূর্তিমান | কোলে কব়্যা রাধারে বংশীতে গীত গান || অপরঞ্চ বিস্তর দেখিল কংসবধ | কান্দিতে লাগিল তখন পাত্র মহামদ || মূর্তিমান লেখা তায় রায় গৌড়েশ্বর | বারভূঞা সমুখেতে সভা মনুহর || আপনি লিখ্যাছে বিশাই অন্য মত নয় | ঝলমল করে ফলা নির্মাণ সঞ্চয় || কর্ণসেন লেখা দেখে বনি রঞ্জাবতী | লাউসেন কর্পঊর দেখে প্রসন্ন মুরতি || বীর কানু দেখে লখ্যা সামন্ত ঝকড় | পাত্র মহামদ তার পাএ করে গড় || গালে দেখে চুনকালি বদনে মাহুর | তার মুন্ডে লগ্নি করে বাটুয়া কুক্কুর || এত অপমান লিখে কোন কারিকর | আপনি দেখিল পাত্র ফলার উপর || হেঁটমুখ ঐমনি রহিল সভাসনে | লাউসেন ভাগিনা বলি যুক্তি করে মনে || আমার ভাগিনা এই রঞ্জার তনয় | বলবন্ত ভাগিনা হয়্যাছে অতিশয় || ফলা দেখ্যা মহাপাত্র জ্বলন্ত আগুন | এতদিনে এহাকে বিধাতা নিদারুণ || চারি পাঁচ দন্ডেতে মজিব লাউসেনে | রঞ্জাবতী আঁটকুড়ি হৈল এতদিনে || এক দন্ড এত সব কৈল অনুমান | ডানিদিগে লাউসেন একদৃষ্টে চান || জিজ্ঞাসিল দুহাকার কোন দেশে ঘর | জোড়হাথে বলে তত্ত্ব কর্পূর পাতর || সবিনয় বচন কর্পূর নিবেদন | ময়না নগর বাড়ী পিতা কর্ণসেন || লাউসেন রাজা এই রঞ্জার তনয় | এত শুনি মহাপাত্র কিছু নাই কয় || দড়বড়ি পালকি উপরে আরোহণ | রাজার দরবারে পুন করিল গমন || দরশন দিলেন রাজার বরাবর | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের কিঙ্কর || একমনে শুন সবে ধর্ম ইতিহাস | দুমন করিলে হয় ধনপুত্রনাশ || দরবারে বসিয়া পুত্র ভাবে মনে মন | কেমনে করিব নষ্ট রঞ্জার নন্দন || অবশ্য বাধিব তারে হাথি চাঠাইয়া | আপনি গৌড় আইল এহার লাগিয়া || বলবন্ত রিপু সৃষ্টি করিল গোসাঞি | রিপু ঋণ রোগ শেষ রাখিবারে নাঞি || ভাগিনা হইতে নষ্ট হইল কংসাসুর | কোথা ছিল লাউসেন আইল এতদূর || এত মনে করিতে বিস্তর বুদ্ধি পায় | বলিতে লাগিল কিছু রাজার সভায় || বারভূঞা আমার বচনে দিবে মন | অবধানে শুন রাজা নিশির সপন || পথে যাত্যে পালকি উপর হৈল মনে | উচিত বচন বলি তোমার চরণে || . ****************** . হস্তিবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |