রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
শুন্যাছি তোমার নাম সংসার বিদিত | কলিযুগে অবতার যেন ইন্দ্রজিত || এত শুনি কর্পূর পাতর কিছু কন | কোথাকার মল্ল বেটা কি জানে সরণ || যেখানে সেখানে বেটা ভিক্ষা মাগি খায় | হেন ছার মল্ল বেটা গুরু হৈতে চায় || এত শুনি লাউসেন হাসে খলখল | সহিতে নারিল গুরু মল্ল সারেঙ্গধল || অচঞ্চল অধর আপনি কোপে নড়ে | আখড়া মন্দিরে কোপে লম্ফ দিয়া পড়ে || গোটা দশ লম্ফ দিল উলটি-পালটি | ময়নার কাঁপি গেল কুড়ি হাত মাটি || বার সঙ্গের পাথর বাঁ হাথে গুঁড়া করে | দুবীরে বাজিল দ্বন্দ্ব আখড়ার ঘরে || দুই বীরে গালাগালি ধূলা মাখে গায় | চাকের ভাঙুরি প্রায় ঘোরে পায় পায় || ধরাধরি দুই বীরে চাকের ভাঙুরি | সংগ্রাম ভাঙিল যেন শার্দূল কেশরী || হাথে হাথে দুই বীরে চলে কসাকসি | ধাত্তাধাই মাথার উপর ঢুসাঢুসি || দুই প্রান্তে দুরন্ত কাছাড়খায়্যা পড়ে | ফণিমণি-শিখরে অবনীখান নড়ে || আখড়ামন্দিরখান নড়ে দুরদুর | কৃষ্ণের সমুখে যেন সাক্ষাত চাণুর || চাপড় হানিল তেজে সারেঙ্গমাল-বুকে | ঝলকে ঝলকে রক্ত নিঃসরিল মুখে || ধন্য বলি বাখানিল মল্ল সারেঙ্গধল | শুখাইল সব তনু খায় গঙ্গাজল || লাউসেন বলে তোর বধিব জীবন | সভে মাত্র দুই যাম দিবস বিলম্বন || এত অহঙ্কার করে ময়নার রায় | লাফ দিয়া সারেঙ্গধল পড়ে তার গায় || দুই মল্লে বাজিল ধূলায় গড়াগড়ি | উলটি-পালটি করে কত হুড়াহুড়ি || লাউসেনের পায়ে ধরি সারেঙ্গধল তোলে | ঐমনি পতঙ্গসম শূন্যে লয়্যা পেলে || বিষ্ণুপদতলে সেন নানা গদ্য গায় | অকালে তুরঙ্গ যেন বিড়ঙ্গ খেলায় || পতঙ্গ সমান কাঁপে লাউসেন বীর | লম্ফ দিয়া পড়ে পুনু আখড়া মন্দির || মালসাট সত্বরে সঘনে সিংহনাদ | দেবতা অসুর বলে এ বড় প্রমাদ || সর্বতনু পরিপূর্ণ মাখে রাঙ্গা ধূলা | মনে করে উড়াব বাতাসে যেন তুলা || খেলা করে স্বরুপ পশ্চাত হয়্যা যায় | হেন বেলা সারেঙ্গেধল ধরে দুই পায় || কাছাড় মারিতে চায় শিলার উপর | পরাজই হৈল বালা লাউসেন কুঙর || ঐমনি কাছাড় সারে মুখে নাই রা | ডানি হাত ভাঙ্গিল, ভাঙ্গিল ডানি পা || ষোল সাঙ্গের পাথর দিল লাউসেনের বুকে | কাতর হৈল সেন রক্ত উঠে মুখে || পরাজই দৈব্যের বিপাকে বীরবল | তবে গিয়া বাসায় বসিল সারেঙ্গধল || আনন্দে বাসায় রহে ছয় শিষ্য কাছে | নিকট মরণ তার বাম আঁখি নাচে || এথা রাজা লাউসেন কাতর বড় মনে | কপূর্র পাতর তারে বলে কানে কানে || মনে নাই পড়ে দাদা অর্জুন-সারথি | এক নামে অজামিল পাইল কোন্ গতি || মনে চিন্তা কর ধর্ম অনাদ্য ঠাকুর | যার নামে জই হৈল বৈষ্ণব বিদুর || এত যদি কর্পূর বলিল বিবরণ | পান্ডব সারথি ধর্ম কৈল সঙরণ || দীনবন্ধু নাম তব বিদিত ভুবনে | মহিমা শুনিল বড় জয়মুনিপুরাণে || মনে হোম মনে যজ্ঞ মনে অর্ঘ্যদান | মনে মনে সঙরণ করে ভগবান || অহে ধর্মঠাকুর দিনের করতার | সুধম্বার রণে কৈলে অর্জুনে উদ্ধার || মহিমা শুনিনু আর পান্ডববিজয় | তবে কেন মল্লের সমরে পরাজয় || মনে মনে অর্ঘ্য দিল ধর্মের চরণে | হেনকালে জানিল অনাদ্য নিরঞ্জনে || অন্তরযামিনী ধর্ম জানিল সত্বর | হনুমানে আপনি বলেন মায়াধর || অবিলম্বে মনে কর ময়না ভুবন | একদন্ড না সহে কথার বিলম্বন || তোমা হৈতে জানকীর হইল উদ্ধার | তোমা হেতু সেতুবন্ধ হৈল অবতার || তুমি মন দিলে হয় পূর্ণ বারমতি | কলিযুগে থাকে তবে পূজার পদ্ধতি || পশ্চিম উদয় দিলে তবে পূজা পাই | লাউসেন রাখিতে তুমি যাও ধাত্তাধাই || . মল্লবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |