রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
এত শুনি দুইভাই সত্বরে পয়ান | দরশন দিলেন মাএর বিদ্যমান || জননী-চরণে দুঁহে করিল প্রণাম | যশোদা সমুখে যেন কৃষ্ণ-বলরাম || চরণে প্রণাম করি লাউসেন কয় | শুন গো জননী যাব গৌড় আলয় || মেস্বাকে দেখিতে যাব মামার চরণ | মামীকে দেখিতে বড় সাধ যায় মন || রমতি নগর দিয়া গৌড় সরণি | ঐ রূপে দেখ্যা যাব গৌড় অবনী || নয়নে দেখিব গিয়া মাসী ভানুমতী | বাহড়িব তোমার নিকট শীঘ্রগতি || তুমি যদি আজ্ঞা দেহ প্রফুল্ল বদনে | তবে যাই গৌড় দেশ রাজ সম্ভাষণে || ঘরে বস্যা থাকিলে সম্পদে সুখ নাই | দরবারে বসিলে বাড়ে বিশেষ বড়াই || ময়না ইনাম পাব পাব খাসা জোড়া | নিজ গুণে দিব রাজা চড়নের ঘোড়া || প্রকাশ করিলে গুণ নাম যশ পাই | তুমি আজ্ঞা করিলে গৌড় দেশ যাই || তুমি ভাগ্যবতী সতী এ তিন ভুবনে | যুগল চরণে ধরি কান্দে লাউসেনে || রঞ্জাবতী রাণী বলে শুন বাপধন | সত্য যদি যাবে তুমি গৌড় ভুবন || পথে যাত্যে সিংহ-শার্দূলের বড় ভয় | অপরঞ্চ লম্পট ভুতুলে পথে রয় || সিন্দার ডাকাত চোর ফিরে সদা গনে | তুমি গৌড় গেলে আমি রহিব কেমনে || তোমা হেতু অভাগিনী শালে দিনু ভর | সদাই যাইতে চাহ দেশ দেশান্তর || মোর পারা অভাগিনী ত্রিভুবনে নাই | সকল বিফল হৈল পুজিয়া চাঁপাই || কার বোলে হবে গিয়া রাজার চাকর | পরাধীন জীবন জগতে ঊনতর || গৌড় যাত্যে নিষেধ করিনু দশবার | তথাপি তোমার মন সেই অনুসার || পরবাসী যেজন পরের অন্নে থাকে | জীয়ন্ত থাকিতে বাপু মরা বলি তাকে || আশিস করিনু আমি হই যদি সতী | সতত করুন রক্ষা শ্রীধর্ম সারথি || হাথে হাথে কর্পূরে করিল সমর্পণ | তোমা হইতে দ্বিগুণ আমার প্রাণধন || দেবতা গরজে যদি বরিষা বাদলে | মনে ত্রাস কর্পূর লুকাবে লয়্যা কোলে || একদন্ডে দশবার চিড়ামুড়ি খায় | হেন বাছা গৌড় তোমার সঙ্গে যায় || কদাচিত অনিলেতে পত্র যদি নড়ে | মনে করে কর্পূর বিপাক যেন পড়ে || গঙ্গাজল বিনে নাই কর্পূরের স্নান | কর্পূরে লইয়া যাবে সদা সাবধান || নিমিখ কদাচ নাই নীলবর্ণ আঁখি | দশবর্ণ কর্পূরের দিনমধ্যে দেখি || খাত্যে খাত্যে দিবসে সদাই আন ধরে | কেমনে বান্ধিব হিয়া ময়না-মন্দিরে || মুড়ি চিড়া সদাই আঁচল ভব়্যা দিবে | অনুক্ষণ সঙ্গে করি কর্পূরে রাখিবে || হাথে হাথে কর্পূরে করিল সমর্পণ | মনে চিন্তা কব়্য বাছা মাএর বচন || শুভক্ষণে বিদায় দিলেন রঞ্জাবতী | লাউসেন কর্পূর যায় গৌড় বসতি || দেব গুরু দ্বিজবরে করিয়া প্রাণাম | অযোধ্যা হইতে যেন বনে যায় রাম || মুখ চায়্যা লোক কান্দে ময়না-রমণী | গোবিন্দ-গমনে যেন গোকুলে গোপিনী || কান্দে রাণী রঞ্জাবতী না দেখে নয়ানে | কোশল্যা ব্যাকুল যেন রঘুনাথ বিনে || ময়নার প্রজা হৈল মরমে বিকল | পার হৈল দুইভাই কালিনী গঙ্গাজল || আগু যায় লাউসেন কর্পূর পাছুয়ান | ডানি হাতে জলের ঝারি কান্ধে ফলাখান || পাছু পাছু কর্পূর চলিছে ধাই দিয়া | সুমিত্রা-নন্দন যেন রাম গোড়াইয়া || পথে যাত্যে দুভাই করেন কোলাকুলি | দুই ভাই পরিল বনের ফুল তুলি || দিবস রজনী পথে সত্বর গমন | পাছু করি রাঙ্গামেট্যা পাইল মন্দারণ || পথিক দেখিলে পথে মুখ চায়্যা রয় | কৃষ্ণ-বলরাম বলি কেহ কেহ কয় || আনে বলে অবতার শ্রীরাম-লক্ষ্মণ | কেহ বলে লব-কুশ শ্রীরামনন্দন || পাছে পাছে কর্পূর চলিছে র়ড়ারড়ি | পরিপূর্ণ আঁচলে সন্দেশ চিড়া মুড়ি || খাত্যে খাত্যে পশ্চাত পতঙ্গ পানে চায় | কেহ বলে কর্পূর দ্বিতীয় ধর্মরায় || লাউসেন কর্পূর বলি ডাকে ঘনে ধন | তুমি আমার সারথি জীবন প্রাণধন || বাপের পরাণ ধন মাএর দুলাল | মুখশশী মলিন যেমন সন্ধ্যাকাল || আগে আছে রাজার সন্দেশ কিন্যা দিব | ভূত ভবিষ্যত তোর বদনে শুনিব || পাঁচদিন দুভাই আনন্দে পথ বয় | নানা উপহার কিনে সঙ্গে নাহি রয় || যেই স্থানে কর্পূর তোমার বিলম্বন | উপনীত সেইখানে আপনি নানা ধন || এত বলি দুই ভাই কোলাকুলি করে | রাঙ্গামেট্যা পার হয়্যা সপ্ত সরোবরে || উচালন পাছু করি মগলমারি পায় | আমিল্যা সরাই তবে এড়াইয়া যায় || সন্নিধানে পাইল সেন বারবাকপুর | তার পিছু রড়ারড়ি ধাইল কর্পূর || দুই হাথে সদাই করিয়া ফলা ঝারি | অকস্মাৎ অবতীর্ণ হৈল গঙ্গাবারি || সন্ধ্যা পূজা সকালে বিকালে জলপান | রাজঘাট পার হয়্যা পাইল বর্ধমান || কর্পূরের আঁচলে দিলেক উপহার | পাইল লাউসেন তবে কর্জনা বাজার || কলুতকে দেখা দিল দুই পর বেলা | জালান্দার গড় দেখে লাউসেন বালা || জালান্দার গড়ে গিয়া দিল দরশন | দ্বিজ রূপরাম গান সখা নিরঞ্জন || . ****************** || মল্লবধ পালা সমাপ্ত || . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |