রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
দুই শিষ্য পায়ে গিয়া ধরিল অচল | লাউসেনের পক্ষাবল সেবকবত্সল || একবারে নিধন করিবে লাউসেনে | ঐমনি কাছাড় দিব ধরিয়া চরণে || দুই শিষ্য প্রণমি গুরুর দুই পায় | লাউসেন করিতে বধ হইল বিদায় || দুই মল্ল একবারে রুষিল তখন | আখড়া দক্ষিণদিগে খেলায় সরণ || বিচিত্র চালনি পরে পরিসর উরু | অঙ্গে রাঙ্গা ধূলা মাখে রক্তবর্ণ গুরু || শূন্যভরে দুইভাই কত তন্ত্র যায় | দুদিকে দু বীর ধরে লাউসেনের পায় || পায়ে ধরি প্রাণপণ করিল বিস্তর | কাছাড়িতে চায় লয়্যা পর্বত উপর || ধরাধরি কাছাড় সারিতে লয়্যা যায় | গড়াগড়ি দু মালে দুদন্ড ভূমে ঠায় || তুলিতে নারিল মল্ল পাইল পরাজয় | দুহাতে দুমল্লে ধরে রঞ্জার তনয় || দুই মল্ল লাউসেন ধরি দুই হাথে | ঐমনি কাছাড় দিল গুরুর সাক্ষাতে || দুই মল্ল তার যদি গেল যমঘরে | দ্বিজ রূপরাম গান বাঁকুড়ার বরে || দু মাল মরিল যদি আখড়ার শালে | লম্ফ দিয়া সারেঙ্গ আইল হেনকালে || শিষ্যের মরণ দেখি মরমে পাগল | যমদূত সদৃশ রুষিল সারেঙ্গধল || মনে করে এবার বধিব লাউসেনে | সরণে ফলঙ্গ দেই চায় চারিপানে || দুই গোটা চাপড়ে পাঠাব যমালয় | চারি শিষ্য চরণে ধরিয়া কিছু কয় || একবারে লাউসেনে ধরিল চারিজন | পর্বতে কাছাড় দিয়া বধিতে জীবন || দেবতা অসুর দেখি হায় হায় করে | একবারে চারি মল্ল লাউসেনে ধরে || দুই মল্ল হাথে ধরে দুই মল্ল পায় | ঐরূপে পর্বতে কাছাড় দিতে চায় || আকাশে তুলিতে চায় অতি পরাক্রম | অকালে পাবক যেন কালান্তক যম || মনে করে লাউসেনে তুলি শূন্যভরে | কেহ পাএ ধরি তার প্রাণপণ করে || হাথে ধরি কাছাড় সারিতে কেহ লড়ে | দান্ডাইল লাউসেন অনন্ত অবতারে || চারিদিগে চারি মল্ল লাউসেন মাঝে | প্রভাতে পতঙ্গবর্ণ অঙ্গে ধূলা সাজে || প্রাণপণে পর্বতে পেলিতে সভে চায় | মলয় পর্বত যেন নাড়া নাহি যায় || কোপে কম্পমান হৈল ময়নার রাজা | মনে মনে তখন করিল ধর্মপূজা || একবারে লাউসেন মারিল কাছাড় | ভাঙ্গিয়া মাথার খুলি চূর্ণ হৈল হাড় || তবে যদি চারি মল্ল গেল যমঘর | মালসাট মারে তবে লাউসেন কুঙর || পরাক্রম বিশাল সঘন সিংহনাদ | দেবতা অসুর দেখি চিন্তিল প্রমাদ || ছয় শিষ্য নিধন সারেঙ্গধল দেখে | শশিমণি শিখরে কাঞ্চন ফণী লেখে || হতাশে শুখাল্য হিয়া অঙ্গে আইল জ্বর | বলিবারে লাগিল লাউসেন বরাবর || দুই গোটা চাপড়ে বধিব আজি প্রাণ | চারিপানে চাহে বীর পাকাল নয়ান || আগু পাছু সরণ খেলায় বিপরীত | একা মল্লবীর হৈল দশ ইন্দ্রজিত || এত শুনি লাউসেন বলিল জোড়কর | তুমি মল্লগুরু গোসাঞি সভার উপর || তোমার সাক্ষাতে আমি কি বলিতে জানি | পুনর্বার মনে কর গৌড় অবনী || বনিতা বালক বন্ধু দেখ গিয়া ঘরে | নতুবা হারাবে প্রাণ ময়না নগরে || যেথা সেথা কল্পনা করিলে এতকাল | মায়ারূপে অবনী অনন্ত মায়াজাল || পড়িলে আমার হাথে নাঞি পরিত্রাণ | অবশ্য এবার তোর বধিব পরাণ || কহিতে বলিতে দুই মল্ল কম্পমান | লাউসেনের দুই পায় ধরিল নিদান || এইরূপে কাছাড় দিলেক গোটা দুই | নিধন হইল বলি অন্য ঠাঁই থুই || ঝলকে ঝলকে রক্ত মুখে তার উঠে | বিশাল বিক্রম বীর বল নাহি টুটে || তাড়িয়া চাপড় হানে সারেঙ্গধল-বুকে | অজ্ঞান হইল মল্ল লোহ উঠে মুখে || ধন্য বলি বাখানিল সারেঙ্গধল মাল | মনে করে এবার আমাকে হৈলে কাল || হাথে হাথে সঘনে বাজিল কসাকসি | ধাত্তধাই মাথায় মাথায় ঢুসাঢুসি || দুজনা বসিতে চায় দুজনার বুকে | চাকের ভাঙুরি প্রায় ঘোরে ঘন পাকে || ধরাধরি ঘন ঘন গড়াগড়ি যায় | শূন্যভরে উলটি-পালটি পুনু পায় || ঝনঝনা মল্লের চরণে তুলা কুটি | পদভরে কাঁপি গেল ময়নার মাটি || সিংহসম বিক্রম সঘনে গালাগালি | ভীমসেন কীচকে যেন বলাবলি || শব্দ শুনি স্তব্ধ হৈল যতেক অসুর | আখড়া মন্দির খান নড়ে দুরদুর || হেনবেলা লাউসেন ময়নার তপোবন | তাড়িয়া ধরিল বীর মল্লের চরণ || বাম হাথে ঘরিয়া সঘনে দিল পাক | গগনে ঘুরায় যেন কুমারের চাক || অবনীমন্ডলে দিল ঐমনি কাছাড় | পরাণ তেজিল মল্ল চূর্ণ হৈল হাড় || নিধন হৈল আজি মাল সারেঙ্গধল | দ্বিজ রূপরাম গান অনাদ্যমঙ্গল || . মল্লবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |