রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
বিস্তর সঙ্কটে ধর্ম্ম দিল দরশন | চম্পক-ধরণী বনি ধর্ম্মের গাজন || পুরদত্ত বারুই উসতপুরে ঘর | এখানে পূজিয়া ধর্ম্ম পাইলা পুত্রবর || তুমি একমনে পূজা কর নিরঞ্জন | তীর্থ-চূড়ামণি এই চাম্পাই ভুবন || তবে যদি মরে ইথে শালে দিয়া ভর | সাক্ষাৎ আপুনি হব সেই মায়াধর || পশ্চাৎ বলিব ধর্ম্মপূজার বারতা | মনে কর সাহস কিসের মন ব্যথা || দূর কর জঙ্গল পূজার কর স্থল | অল্পদিনে জানিব ধর্ম্মের বলাবল || বার দিন নিয়ম বারমতী পূজাবিধি | এহাতে অনাদ্য পাবে মনে কর যদি || তবে সে ত্রিলোক্যবিজয়ী হব ধ্বনি | তপ কব়্যা এখানে মরিল কত মুনি || এত শুনি রঞ্জাবতী অঝোর-নয়ান | ইছারানা হাড়িকে ডাকিয়া দিলা পান || পান-ফুল দিয়া বলে বিনয় বচন | স্থান কর সত্বর আপনি কাট বন || এত শুনি ইছারানা নিল পান-ফুল | বামদিগে বন কাটে চাম্পায়ের কূল || হৈতাল দরন্ত কাটে দূর করে মূল | শাল পেয়া-শাল কাটে কাটে আঁকড় বকুল || লবঙ্গ সোদালী কাটে আর বাকসোনা | রাখিল শুখান কাষ্ঠ পোড়াতে ধুনা || বিশেষে বদরী কাটে খাজুর রঙ্গন | সত্যের সমুখে রাখে তুলসীর বন || গর্জ্জন আসন রাখে দক্ষিণের কূল | কেতকী কুড়চি কাটে কদম্ব শিমূল || মার্জ্জনা করিলা স্থান মরকত মতি | দেখিয়া হরিষ তবে হৈল রঞ্জাবতী || করুণা-সাগরে ভাসে কমলবদনী | কহিতে লাগিল শুন সানুলা বহিনী || বন কাট্যা ইছারানা বান্ধিল জগদি | যাহাকে করিব পূজা ধর্ম্ম গুণনিধি || কপিলার গোমঞে পবিত্র কৈলা মাটি | তিনবার দিলেক চন্দনের ছড়া-ঝাঁটি || টাঙ্গল্য আলম-চান্দা করে ঝলমল | পরিপাটি সুন্দর পূজার কৈল স্থল || চারিদিকে রাখিল পূজার আয়োজন | রবি জবা সমান সিন্দুর আশী মণ || সন্ন্যাসী ভকিতা ডাকে ধর্ম্ম জয় জয় | রঞ্জাবতী কান্দিয়া করুণা কিছু কয় || স্নান কর চম্পক সমুখে চন্ডমুখী | যার পূজা সাধিলে শঙ্কর বড় সুখী || তবে যদি কার্য্য সিদ্ধ হয় কদাচিৎ | কানে সোনা দিব গজ-মুকুতা সহিত || প্রতিজনে পরাইব পুরটের বালা | তবে যেন দিবসে তিমির হয় আলা || আইস ভাই ভকিতা চম্পক নদী যাব | জল পরশিলে পার পরলোকে পাব || শুন্যাছি পন্ডিত-মুখে সাক্ষাৎ সামুলা | কত লক্ষকের সূতা হয়্যাছে হে তুলা || স্থল-গুণে শুন্যাছি সজাগ শাস্ত্র পড়ে | সেই অবতীর্ণ মায়া চম্পকের তড়ে || কাজ নাঞী বিলম্বে সকাল কর স্নান | তপস্যা করিলে মহী-ধন-পুত্রবান্ || এত শুনি চাঁপাই চলিলা সর্ব্বজন | রূপরাম গীত গান দৈমন্তী-নন্দন || অবধানে শুন সভে ধর্ম্ম ইতিহাস | দু-মন করিলে হয় ধনপুত্রনাশ || দু-হাতে বেতের বাড়ি নাচে রঞ্জাবতী | বিষাদ-বরনা বাদ্য বাজায় বায়তি || ডাল ভাঙ্গ্যা নিল হাতে হনুমান পোতা | সামুলা আমিনী নাচে জয়পাল-সুতা || বাক্য পড়ে পন্ডিত ভট্ট বেদ গান | চম্পকে করিতে স্নান রঞ্জাবতী যান || চাঁপাই নদীর ঘাটে দিলা দরশন | রায়টী পাথরে বান্ধা ঘাট বিলক্ষণ || পলাশের বন যেন পরিপূর্ণ পানা | ঘাট মুক্ত আপনি কব়্যাছে ইছারানা || . শালেভর পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |