রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
দধি দুগ্ধ পায়স অনেক উপহার | চারিদিকে ভকিতা সম্মুখে রঞ্জাবতী || দক্ষিণে বস্যাছে দ্বিজ পূজার পদ্ধতি | নানা পুষ্প দিয়া পূজা করে নিরঞ্জন || একে একে আইল উনকোটি দেবগণ | পঞ্চপাত্র দুয়ারী বেতাল আবাহন || জবা ফুলে সূর্য্যতবে সমুখে অর্চ্চন | গাজন বাহিরে থাকে কুবের ভান্ডারী || উকদন্ড সম্মুখে জ্বালিল সারি সারি | প্রজাপতি পবন পূজিলা ডানি ভাগে || ধূপধূনা পরিপাটি ঘোর অন্ধকার | শঙ্খধ্বনি ঘন ঘন জয়ধ্বনি আর || দিন প্রতি দুইবার মিলে অর্ঘ্যদান | সত্য অনুভাবে দেই সভাকে জানান || আনন্দের সীমা নাই চাঁপায়ের ঘাটে | সাংসুয় ভকিতা সব জয় দিয়া খাটে || সম্মুখে দান্ডাএ কেহ ঢুলায় চামর | এক পায়ে দান্ডায়্যা কেহ মাগে বর || রঞ্জাবতী রানী বলে কান্দিয়া কান্দিয়া | পুত্রবর দিবে প্রভু বৈকুন্ঠ ত্যজিয়া || ওহে ধর্ম্ম ঠাকুর দিনের দিবাকর | কানা হউক খোঁড়া হউক একপুত্র দিবে || অভাগীর পূজা তুমি হাত পাত্যে নিবে | কাল দন্ড দুই হাতে আগুন জ্বলে তায় || ধুনা দিতে ঐমনি জ্বলিয়া পড়ে গায় | চূর্ণমণি পাবকে পোড়াব সব তনু || দিবসে দ্বিগুণ দেখি তপনের রেণু | রঞ্জাবতী একে একে করিছে সন্ন্যাস || বিষম খাজুরকাঁটা করে সর্ব্বনাশ | তবে দিল আপনি ত বলিদান || পুত্রবর দেহ মোরে প্রভু ভগবান | আশী মণ ধুনা পোড়ে অঙ্গের উপর || তবু দয়া না করেন দিনের দিবাকর | সন্নিধানে কব়্যাছে বেণু রাজার দুহিতা || মঞ্চের উপরে উঠে উচ্চ কুড়ি হাত | দিবাকরে অর্ঘ্য দেই বহে অশ্রুপাত || যুগ্ম নারিকেল করে জলে জবা যুড়ি | তায় তুলসীর পত্র দুই হাথে কড়ি || উচ্চস্বরে ব্রাহ্মণ বলায় বেদবাণী | সূর্য্য পানে চাইয়া বলে রঞ্জাবতী রানী || আমি অর্ঘ্য দান দিব হাথে হাথে নেও | বিনয় করিয়া বলি পুত্রবর দেও || এক পুত্র বিনা দুই পুত্র নাহি মাগি | মোর পারা ত্রিভুবনে কে আছে অভাগী || সাক্ষাৎ দেবতা তুমি দেখ সব চাইয়া | এক পুত্র দিবে প্রভু অভাগী দেখিয়া || আপনি জানাবে পূজা ধর্ম্মের চরণে | লোচন থাকিতে অন্ধকার দেখি দিনে || বলিতে বলিতে রানী জলে দিল ঝাঁপ | তপস্যা দেখিয়া রানীর ত্রিভুবন কাঁপ || পাবক সমান বাণ হীরাতুল্য ধার | মাঝ-বুকে ভাঙ্গিয়া করিল চুরমার || ধার গুরু সমুখে সত্বরে রাখি বাণ | অর্দ্ধচন্দ্র মাঝ-বুকে করে খান খান || দু-হাতে তুলিয়া বাণে ঝাঁপ খায়া পড়ে | জয় ধর্ম্ম বলিয়া আপনি জিব নড়ে || অর্দ্ধচন্দ্র মাঝ-বুকে করে খানি খানি | কোমরে কাপড় বান্ধ্যা পাট ভাঙ্গে রানী || এইরূপে সন্ন্যাস কব়্যাছে সারাদিন | আগুন-সন্ন্যাস করি মরমে মলিন || গতায়ত পাবকে প্রমাণ কুড়ি হাত | ধুনার আগুন তায় যেন বজ্রাঘাত || গলায় জিজির বান্ধা দুই পায়ে বেড়ি | লোহার শিকল কড়ে যায় গুড়ি গুড়ি || হরি বলে সন্ন্যাসী ভকিতা দুই ভাগে | আগুনে চলিয়া যায় পুত্রবর মাগে || মরমে বিকল হয়্যা বলে ঘনে ঘন | এক পুত্রবর মাগি প্রভু নিরঞ্জন || এত বলি আগুন উপরে আইসে যায় | তথাপি চাঁপাই তীরে বর নাহি পায় || দুপাশে বিন্ধিল কাঁটা তায় দিয়া সুতা | আইসে যায় জুড়ি হাত রাজার দুহিতা || সামুলা আমিনী ঘন দেই জয় জয় | সন্ন্যাসী ভকিতা কান্দে মনে পায়্যা ভয় || তবে রানী সুন্দরী মাথায় পোড়ে ধুনা | বিটঙ্কবদনী কান্দে করিয়া করণা || পথে ঘাটে লোক দেখ্যা বলে আঁট কুড়ি | তার পাকে ধর্ম্মঠাকুর মাথায় ধুনা পুড়ি || . শালেভর পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |