রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
ঘুরে ঘুরে ঐমনি উলঙ্গ হয়্যা নাচে | শীঘ্র অকস্মাৎ শব্দ সূর্য্যদেব কাছে || আকাশপাতাল মুখ দেখি লাগে ত্রাস | রথের উপরে রবি করিতে চায় গ্রাস || বাম হস্ত তুল্যা নাচে দক্ষিণ হস্ত বুকে | দন্ত-কড়মড়ি দেই সূর্য্যের সমুখে || থাক থাক সকল বচনে হায় হায় | গুড়িগুড়ি স্ত্রীহত্যা আগুএ পাছয় || পূর্ণরাকা সদৃশ রথের ঝলমলি | দেখিতে দেখিতে রথ হয়্যা গেল কালি || চূড়ায় চামর চারু ধ্বজা উড়ে তায় | আচম্বিতে ঐমনি যে রথ পুড়্যা যায় || কালীবর্ণ রথ হৈল ঘোড়া আর রবি | অরুণ সারথি হৈল জলধর সারথি || শালে ভর দিয়া মৈল রানী রঞ্জাবতী | পুত্রের কারণএ মৈল চাঁপায়ের বনে || তার হত্যা তূর্ণগতি আগুলিল গনে | নৃত্য করে সমুখে তুসিয়া দুই বাহু || বিমা হইল কালি তামার বরণ | অনুমান করে পারা অকালে গ্রহণ || মহা অন্ধকার হৈল অপরঞ্চ কি | এসব অনর্থ করে বেণুরায়ের ঝি || অরুণের বচন শুনিঞা দিবাকর | মনঃকথা মনে মনে চিন্তিলা বিস্তর || পুণ্যবান্ হয়্যা যেবা পাপকর্ম্ম করে | কলিযুগে সে পাপ আমার সাথে ধরে || তুমি আমার সারথি অরুণ ছোট ভাই | কিবা কাজ বিস্তর ধর্ম্মের সভা যাই || কেহ কেহ ইচ্ছাসুখে মরে গঙ্গাজলে | তাহা দেখি তরাসে বিমান নাহি চলে || বিমাতা সহিত কেহ বৈসে একাসনে | কালি-বর্ণ রথখান হয় দিনে দিনে || ধিক ধিক এসব বিষয়ে নাহি কাজ | এত বলি সূর্য্য চলে ধর্ম্মের সমাজ || একে সূর্য্য আগুন দ্বিগুণ দুঃখ মনে | বিমান রাখিয়া যান বৈকুন্ঠভুবনে || সর্ব্বতনু সচঞ্চলে সর্ব্বলোকে দেখে | বৈকুন্ঠে বসিয়া ধর্ম্ম মনের কৌতুকে || সারি সারি বস্যাছে উনকোটী দেবগণ | কোণে কম্পমান সূর্য্যদেখিলা তখন || ব্রহ্মাদি দেবতাগণ হইল নিশব্দ | আপনি ঠাকুর তবে পাঠাল্য নারদ || ঢেঁকী চড়্যা চলিল নারদ মুনিবর | দ্বিজ রূপরাম গান শ্রীরামপুরে ঘর || ধর্ম্মের আদেশে নারদ মহামুনি | মায়ারূপে আইলেন সূর্য্যের সরণি || বেনা গাছে জট বান্ধ্যা গড়াগড়ি যায় | কোপে কম্পমান সূর্য্য দেখিবারে পায় || সূর্য্য মনে জানিল নারদ মহামতী | কিমর্থে না জানি তবে এতেক দুর্গতি || দ্বিতীয় অসুখ নাঞী ধূলায় ধূসর | দুর্গতি দেখিয়া দুঃখ ভাবে দিবাকর || দুই দন্ড নাঞী পাল্য নারদের সাড়া | অসুরে বান্ধ্যাছে পারা দিয়া ঝুঁটি-নাড়া || যেখানে সেখানে বসি ভাবেন উপায় | দেবতা দেখিয়া পথে পড়িলা মায়ায় || মরিলা নারদ মুনি হইলা নিদান | বন্ধন করিল চুল তনু হতজ্ঞান || দয়া কব়্যা আপনি অঙ্গের ঝাড়ে ধুলা | নারদ চিন্তিলা মনে কন্দলের বেলা || কম্পমান মহামুনি বলে ডাক দিয়া | তপস্যা ভাঙ্গিলি বেটা কিসের লাগিয়া || বেনা গাছে চুল বেন্ধ্যা আমি তপ করি | মনে মনে জপি আমি চতুর্ভুজ হরি || তোমার উপরে আমি ব্রহ্মশাপ দিব | আমি যে ব্রাহ্মণ তাহা সংসারে জানিব || এ বোল বলিয়া হাথে নিল গঙ্গাজল | সূর্য্য সবিনয় করে মরমে বিকল || ব্রহ্মশাঁপ বৈ পাপ নাঞী ত্রিভুবন | ব্রহ্মশাঁপে মৈল সব সগরনন্দন || কৃষ্ণের দুয়ারী জয় বিজয় কুমার | ব্রহ্মশাঁপে অসুর হয়্যাছে তিনবার || তপস্বী হৈলে গোসাঞী ক্ষমা দেহ মনে | দু-জনে হৈল প্রীতি প্রেম-আলিঙ্গনে || দেবতা সমুখে গিয়া দিলা দরশন | রবি দেখি উঠিলা যতেক দেবগণ || আপনি চঞ্চল প্রভু অনাথের নাথ | দিবাকর বলেন শিরেতে তুলি হাত || শালে ভর দিয়া রানী রঞ্জাবতী মৈল | প্রাণিগন্ধ অবতীর্ণ বাসি মড়া হৈল || পুত্রের কারণে মৈল এই তার পণ | পুত্রবর দিতে চল প্রভু নিরঞ্জন || তিন দিন নিধন জাম্বুকে পাছে নেই | সামুলা সেখানে থানা নিরবধি দেই || চল চল আপনি বিলম্বে নাহি কাজ | পিতামহ সঙ্গে নেহ আর দেবরাজ || লহ প্রভু বিশাই কামার এত দূর | তবে পুত্রবর দিতে চলিলা ঠাকুর || বৈকুন্ঠ রাখিয়া ধর্ম্ম চলিল চাঁপাই | সুবর্ণ বিমানে বসি যান ধাত্তাধাই || পুত্রবর দিতে বড় হইল অভিলাষ | দেখা দিলা উত্সপুরে রাখিলা আকাশ || উত্সপুর দেখিয়া চাঁপায়ে রথ যায় | কত গন্ডা কাঞ্চনকিঙ্কিণী বাজে তায় || রুনুঝুনু রথখান পরিপূর্ণ বোলে | মন্দমন্দ আপনি ধর্ম্মের রথ চলে || হেন বেলা ব্রাহ্মণ দরিদ্র মনোহর | বড় অপমান পাইল সাত ভায়্যার ঘর || ব্রহ্মহত্যা ধর্ম্মের উপরে দিতে চায় | রথে বস্যা ধর্ম্মরাজ দেখিবারে পায় || এক মহাপাতকে বলিতে নাহি স্থল | ব্রহ্মহত্যা দিবি কেন তার কথা বল || কান্দিতে কান্দিতে দ্বিজ মনোহর কয় | সারাদিন ভিক্ষা মাগি তবু নাহি হয় || সাত ভায়্যার ঘরে বড় পাইনু অপমান | ভিক্ষা নাহি দিল ভাগ্যে এড়ানু পরাণ || . শালেভর পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |