রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
কান্দিতে কান্দিতে দেয় ধর্ম্মের উপর | পরাণে কাতর হয়্যা মাগে পুত্রবর || এক মনে শুন সভে ধর্ম্মশাস্ত্র-বাণী | সন্ন্যাস করিল কত রঞ্জাবতী রানী || তপস্যা করিতে তনু হৈল অবশেষ | তবু না পাইল রানী ধর্ম্মের উদ্দেশ || কেমন দেবতা ধর্ম্ম না দেখি নয়নে | কার্য্যসিদ্ধি না হইল চাঁপায়ের বনে || আমি খন্ড-কপালিনী তোমার দোষ কি | এতদিন পোড়াইনু মাথার ধুনা ঘি || দশ দিন বৈ হইল কালি একাদশী | তপস্যার দুঃখ হৈল শশী বিন্দু নিশি || চারিবিন্দু চক্রবাণ বুকে কৈল চুর | তবু দেখা নাঞী দিলা শ্রীধর্ম্ম ঠাকুর || নতুবা বাড়িকে চল দিয়া বিসর্জ্জন | সদাই ভরসা মনে তোমার চরণ || দুঃখ পাইল সন্ন্যাসী ভকিতা অচিরাৎ | কত আর মাথার উপর দিব হাত || বচন বলিতে রানীর অঙ্গে নাহি বল | দয়া না করিলা ধর্ম্ম ভকতবৎসল || কোথা কো দেবতা দুরন্ত হয়্যা আছে | কত আর করুণা করিব তব কাছে || তুমি বল্যাছিলে বলি চাঁপাই নদী যাবে | অষ্টদিনে সেখানে ধর্ম্মের দেখা পাবে || বল্যাছিলে আপনি সন্ন্যাস দিলা সব | দুঃখদশা হৈল দূর তোমার গৌরব || ভারথে মহিনা শুনি ব্যাসের লিখন | কো গুণে সে জন দিবেক দরশন || বর দিবে অনাদ্য প্রত্যয় নাঞী মনে | ললাট-লিখিত দুঃখ না যায় খন্ডনে || কাতরে করণা বাণী রঞ্জাবতী কয় | শুন্যাছে সদাই ঘরে পান্ডববিজয় || কত মুনি মব়্যাছে তপস্যা যার জোর | তথাপি ধর্ম্মের কেহ না পাইল ওর || কোনখানে বৈসে ধর্ম্ম থাকে কোন ঠাঞী | কলিযুগে একথা বলিতে কেহ নাঞী || কেবা দেখ্যাছিলা ধর্ম্ম কেমত আকার | জলে না স্থলে আছে নানা অবতার || পস্যাতে পাবে ধর্ম্ম যোগে লেখা আছে | কত যুগ তপস্যা করিলে পাই কাছে || দিন কত সন্ন্যাস করিলে সভে তুমি | সাত জন্ম তপ কৈল পরাণেতে শুনি || আর কথা বলি রানী শুন সাবধানে | তবে তুমি নিয়মে পূজিবে নিরঞ্জনে || উতঙ্ক আমার (? )গুরু বসিষ্ঠের বরে | এক জন্ম হয়্যাছিল কিরাতের ঘরে || অনাদ্য পূজেন বলি নর্ম্মদার তীরে | দেবতা সকল যত তাহার ভিতরে || বরুণ বিধাতা ইন্দ্র দেব ত্রিলোচন | একে একে সন্ন্যাস করিল দেবগণ || সকলে আসিয়া সেবে ধর্ম্মের চরণ | তবু নাঞী দয়া করে দেব নিরঞ্জন || বসুমতী ভাগীরথী জয়দূর্গা দেবী | সাবিত্রী আমিনী হৈল যত দেব-সেবি || নিয়ম ধরিয়া কত সন্ন্যাস করিল | ধর্ম্ম দরশন তারা তবু না পাইল || তিনবার মরুত করিল ঘরভরা | বর্ত্তমান দেখ ধর্ম্ম পুরাণ দেহারা || সীতা মন্দোদরী তারা সত্যের আমিনী | এখানে পূজিল ধর্ম্ম দেখ্যাছি আপনি || সভাকার সিদ্ধ হইল মনের বাসনা | মরুত বিধতা হৈল ইন্দ্র দিন তানা || সত্যে পূজা কব়্যাছিল ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী | গরুড়-বাহনে দেখা দিল চক্রপাণি || মানব দেবতা যত জীবজন্তু আছে | আগুনের সনে পোড়ে কেহই না বাঁচে || ইত্যাদি অনেক আছে নানা প্রেত ভুত | কব়্যা দিল এ সব ধর্ম্মের যত দূত || অনন্ত হইতে সাধ নিত্য করি মনে | ধর্ম্মের মহিমা যেন গাই রাত্রি দিনে || জলে স্থলে ধর্ম্মরাজ ধর্ম্ম বিষ্ণুময় | ধর্ম্মের নিয়মে বনি সর্বজন রয় || তুমি সত্য পূজা বনি দিলে নিরঞ্জনে | তথাপি ধর্ম্মের দেখা না পাইল স্বপনে || মরুত সমান বনি তোর মন দড় | পতিব্রতা সতী তুমি সভা হৈতে বড় || কালরূপী হল্যা হরি ফলের কারণ | নতুবা কলুষহরা লিখে সর্ব্বজন || কেহ বলে শাল-কাঁটা কেহ বলে কাল | হিমালয়ে পূজা দিল পন্ডিত বেতাল || ভূত প্রেত পিচাশ সভাই হৈল জড় | তোমা হৈতে মুক্তি যে পায়্যাছে সব দড় || আমি বড় অভাগিনী নহ প্রতিকূল | নম নম বলিয়া বিস্তর দিল ফুল || দন্ডবৎ অনেক করিল জেড়হাথে | তখন সামুলা বলে রঞ্জার সাক্ষাতে || ভয় নাঞী অর্জ্জুনসারথি মনে কর | রাম কৃষ্ণ বলিয়া শালেতে দেহ ভর || জগৎমন্ডলে যদি কীর্ত্তি যশ রয় | পরকাল অবশ্য তাহার কার্য্য হয় || . শালেভর পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |