রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
মনুষ্যের রুধিরে কেমনে ভক্তি হৈল | ইহা দেখি দেবতা অসুর হাস্যা মৈল || এ তিন ভুবনে পূর্ণ হৈল এই লাজ | কেমনে বসিব মামা দেবতা সমাজ || ডাকিনী বলাল্যে তুমি কে বলে ঈশ্বরী | নিশ্চয় সংসারে বলে অসুর-ভাতারি || লাউসেনের রক্তে যদি স্বাদ নাঞি পাও | কাছে আছে ইছা ঘোষ ঘাড় ভাঙ্গা খাও || এত বলি নারদ উঠিয়া রড় দিল | রঙ্কিণী বিমলা বড় জ্বলন্ত হইল || মাস খাব নারদের ঘাড়ে কামড় দিব | কেমন দেবতা আজি নারদে রাখিব || প্রাণ লয়্যা পালায় নারদ মুনিবর | তার পাছে ভবানী বলেন ধর ধর || মহামুনি কাটিতে ঈশ্বরী অসি কাচে | কেহ বলে কদাচ নারদ মুনি বাঁচে || পালায় নারদমুনি কৈলাসের পথে | তার পাছে হৈমবতী ঢাল খান্ডা হাথে || বিষম বিমানে ধায় লইয়া আপনা | আলাল্য দীঘল কেশ পথে পড়ে বীণা || নবগুণ পইতা পড়িল দুই পায় | পালাইতে পরিধান আপনি আল্বায় || বিধাতা বরুণ ইন্দ্র দিগন্তর ডরে | দারুণ বিপত্ত হৈল নারদ উপরে || পড়িলে ঐমনি উঠে উঊমুখে ধায় | হাতাহাতি নারদ কৈলাসগিরি পায় || তৃষায় আকুল তনু বসন বিরলে | তরাসে লুকায় মুনি মহেশের কোলে || হেন বেলা ঈশ্বরী সমুখে দরশন | শিব হেতু নারদের রহিল জীবন || শঙ্কর সমুখে দেবী লজ্জা পাল্য মনে | হেঁটমুখে ঈশ্বরী বসিলা ততক্ষণে || মাথায় বসন দিল নিজ রূপ ধরি | নারদ বলেন মামা নিবেদন করি || মামা নাঞি জান তুমি মামীর চরিত | মনুষ্য কাটিয়া মামী খাইল শুণিত || মানবের রক্ত বলি না করিল ঘৃণা | ভক্ষণ করিল দেবী যেন জলপানা || যেখানে সেখানে মামী ধরে ঢাল খাঁড়া | মামা নাঞি জানহ মামীর হাতনাড়া || দেবতা তোমার ঘরে নাঞি খাব জল | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের মঙ্গল || এক মনে শুন সভে ধর্মের কথন | পুনর্বার ঢেকুরে বাজিল মহারণ || ইছাই বলিল শত্রু গেল রসাতল | পাসরিল ভবানী অঙ্গের টুটে বল || আকাশে আপনি ব্রহ্মা ডাক দিয়া কয় | ইছাই নিধন কর রঞ্জার তনয় || ইন্দ্র বলে ইঙ্গিতে মেঘের আড়ে বসি | মনে জ্ঞান কর শীঘ্র ধর্মের তপসী || গড়ে নাঞি ভবানী বিলম্ব নাঞি সয় | ঢেকুর জিনিলে তবে পূর্ণ পূজা হয় || জ্ঞান পাল্য লাউসেন ময়নার তপোধন | লম্ফ দিয়া উঠিয়া ইছাএ মাগে রণ || গোয়ালা উপরে যেন পড়ে বজ্রাঘাত | অমঙ্গল অনেক অকালে উল্কাপাত || রণস্থলে ইছাইর বাম আঁখি নাচে | দয়াময় লাউসেন বলেন তার কাছে || দেবতা চরণে বেটা দুমন করিলি | মঙ্গল বাসরে কালি পূজা নাঞি দিলি || এই পাকে পরিত্যাগ অকালে অমর | নহে রণে ভঙ্গ দিয়া যাহ দেশান্তর || রামের শরণ যেন বিভীষণ নিল | সেই পরাজয় দেহ তোমারে বলিল || এত শুনি ইছা বীর অগ্নির সমান | খাঁড়া ঢাল ধরিয়া বলিছে বিদ্যমান || রাবণের পারা কেন রণে ভঙ্গ দিব | তবে যদি পরাজই এখানে মরিব || জয়দ্রথ ভঙ্গ যেন দিয়াছিল রণে | তার অপযশ কথা ভারত লিখনে || একে মহারণস্থল তোমার সমুখ | ইহাকে অধিক আমি কোথা পাব সুখ | তরণি-তনয় কর্ণ সমরে নিধন || হৈল কেন পরাজয় বাণের নন্দন | এত বলি দুবীর রুষিল কাল যম || ভীম দুর্যোধনে যেন বাজিল বিষম | পাটনে ছাইল মহী অম্বর তরণি || দুজনার মনে নাঞি দিবস রজনী | শনিবার দিন একে তায় সন্ধ্যাকাল || অমাবস্যা ঘোর তিথি তিমির অকাল | ঢেকুরে অকাল বাদ্য শব্দ ঘন ঘোর || স্তব্ধমান রণে হৈল ইছাই কোঙর | ফলঙ্গ চঞ্চল গুরু ইছা অসি হানে || ভাগ্য পুণ্যে লাউসেন বাঁচিল সেইখানে | ঘন ঘন উড়া পাক ঘামে তোলবোল || ঢালে বাজে ঘাঘর ঘন্টার ঘন রোল | শরাসন রাখিয়া দুবীর অসি হানে || রণমদে মাতিল নিষেধ নাঞি মানে | ঘন ঘন উড়া পাক ঘামে তোলবোল || উলটি পালটি হানা পড়ে ঝনঝনি | মার মার কাট কাট পড়ে ঘোর ধ্বনি || পাবক নিকলে চক্ষে বদনে রুধির | জয় রাম গোবিন্দ গোপাল বলে ধীর || হস্তীর হাঁফাল দুই বীর সস্ত্রপাণি | ডাকাডাকি ভীম ঘোর শব্দ হানাহানি || লাউসেন ইছাই বীর হানে তাড়াতাড়ি | জয়দুর্গা বলি মুন্ড যায় গড়াগড়ি || কাটা মাথা স্তব করে পড়িয়া ভূমিতে | বাসুলি রঙ্কিণী নারায়ণী নমোস্তুতে || পুনরপি কন্ধে বস্যা বলে কাট কাট | ত্রোটি টুটে ইছাই সঘনে ফলাসাট || যতবার মুন্ড কাটে ততবার উঠে | ইছাইর রণ দেখ্যা লাউসেন টুটে || বিরলে বসিয়া যুক্তি করেন বিধাতা | বৈকুন্ঠে ভুবনে রাখ ইছাইর মাথা || গোলকে এ মুন্ড যদি হনুমান রাখে | বিষ্ণুর চরণে যদি সেই মুন্ড থাকে || . ****************** . ইছাইবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |