রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
ঐমনি ভাসিল জলে উশনের হাঁড়ি | ঘটি বাটি থালা ভাসে কাঞ্চনের পেড়ি || মাঠ ঘর মন্দির পড়িল বহ্নিবাজ | তরঙ্গে রাখিতে নারে তরণী জাহাজ || ঢেউর উপরে ঢেউ প্রমাণ পর্বত | হাথি ঘোড়া ভাস্যা যায় সিংহাসন রথ || খাট পাট জলে ভাসে মরাইর ধান | সরিসা কাপাস তিল গম মূগ পান || বানেতে বুড়িল রাজ্য রাজার মহল | ধর্মের গাজনে সভে হইল বিকল || ধর্মপূজা রাখি সব সন্ন্যাসী ভকিতা | জাড়ে শীতে বাতাসে বদনে নাঞি কথা || রাশি রাশি জলে ভাসে বিপর্যয় ফেনা | দশদিগ ভৈরবীর বয়্যা যায় খানা || জীবন সঙ্কট কেহ জাকে পরিত্রাই | কেহ বলে অকস্মাত সর্বনাশ ভাই || জনক পুত্রের মুখ ফিব়্যা নাহি চায় | বার পণ চালু সের বাজারে বিকায় || পরশ হইল তৈল লবণ কর্পূর | বরিষণ ধারা ঘোর ঝঞ্ঝনা চিকুর || এইমতে জলে ভাসে সকল গোউড় | জলের হিল্লোল ভাঙ্গে পর্বতের চূড় || রমণী পুরুষ ভাসে বালক প্রবীণ | নিশ্চয় বলিতে নারে রাত্রি কিবা দিন || উল্কাপাত বরিষণ ঘন পড়ে শিল | যুবতীর হাতের তাড়ের খসে খিল || বত্রিশ ভান্ডার বুড়ে বাহান্ন বাজার | আট নাএ উঠিল রাজার পরিবার || এ সব প্রমাদ মনে নাঞি করে রাজা | একমনে আপনি ধর্মের করে পূজা || তরাসে ভকিতা ধর্মে ডাকে উচ্চস্বরে | দোলমাল তখন ধর্মের ঘর করে || বাতাসে সভার হৈল কম্পমান তনু | পূজা রাখি ঐমনি ধরিল কেহ জানু || প্রভুর দেহারা ঘর ঝড়ে তোলপাড় | দশ বিশ হাথ তোলে কখন কাছাড় || এলাকার উপহার কামান কলসে | সম্পদ ভান্ডার সেনা গেল কোন দেশে || ঘুরুন্যা বাতাসে ভাঙ্গে সন্ন্যাসীর কাঠি | সাগর দেখিল গিয়া গামারের পাটি || চরকের কাঁটা যেন বুলে বাণেশ্বর | জয় পায়্যা প্রাণদান হৈল অজগর || ভাসিল গণেশঘট পন্ডিতের পুথি | চৌদিগে বেড়িল বান দশ অম্বুবতী || পুরট পাদুকা ভাসে আর রথঘর | ঢাক ঢোল বাদ্যভান্ড মন্দিরা চামর || আমিনি সকল বলে রাখ ধর্মরায় | পাত্র মহামদ বলে ভূপতির পায় || সর্বনাশ হৈল ধর্মপূজার কারণ | এ দেশে এমন পূজা নাহিক কখন || কেমন দেবতা ধর্ম আমি নাঞি জানি | আরম্ভ করিতে পূজা অমঙ্গল বাণী || এই হেতু অকাল মরণ এই দেশে | একমনে দশদিন দেবতা বরিষে || এমন দেবতা পূজা করে কোন জন | পূজার আরম্ভ দিনে বান বরিষণ || রাজা হয়্যা সংসারে সন্ন্যাস করে কে | এখন এমন পূজা বিসর্জ্জন দে || ঘটে বিসর্জন দিলে রাজ্য রক্ষা পায় | নতুবা সংসার মহী বানে ভাস্যা যায় || আপনি ধর্মের পাটা রাখহ এখানে | বাদল ঘুচিলে পূজা দিব একমনে || পাত্রের বচনে রাজা গণিল বিষম | রাখিল গলার পাটা লঙ্ঘিল নিয়ম || ঘর গেল গৌড়েশ্বর পাত্রের বচনে | জলপান করে সুখে আমিষ্য ভোজনে || নিজালয় গেল তবে গৌড়ের পাতর | ইন্দ্রজাল ঘর গেল ভাট গঙ্গাধর || ষোলশ ভকিতা ছিল ধর্মের গাজনে | পাটা পেলি ঘর গেল রাজার গমনে || গাজন হইল শূন্য সভে গেল ঘর | সবে মাত্র নিয়মে রহিল হরিহর || আমিনি সকল পথে করে জলপান | মড়ক লাগিল দেশে নাহিক কল্যাণ || অধর্মে সকল লোক হৈল কদাচারী | লক্ষের ঠাকুর হৈল কড়ার ভিখরী || গায়ের বসন কাল চাঁপা রুচি নীল | সূর্যের উদয় নাঞি ভাসে তিমিঙ্গিল || শিলা ঝড়ে চূর্ণ হইল বড় বড় গাছ | আস্ফালন সত্বর সলিলে খেলে মাছ || পশ্চিমা বাতাসে শুধু মেঘের সঞ্চার | কদাচিত নাঞি বৈসে রাজার দরবার || মহারাজা কাতর পাত্রের মুখ চায় | বল মহামদ পাত্র এহার উপায় || পাত্র বলে মহারাজা শুন নিবেদন | লোক পাঠাইয়া দেহ ময়না ভুবন || লাউসেন ভাগিনা বসিয়া ক্ষেম খায় | বিপত্ত পড়িলে তবু ফিব়্যা নাঞি চায় || অবিলম্বে পরোয়ানা লিখ মহাশয় | লাউসেন আইলে রাজ্যের ভাল হয় || পাত্রের বচনে রাজা লিখে পরোয়ানা | ইন্দাকে বলিলে চল দক্ষিণ ময়না || অবিলম্বে এখনি আনিবে লাউসেনে | দুহাথে তোড়র দিব পুরট শ্রবণে || বিপত্তে যে হয় সখা তারে বলি ভাই | বিদায় হইল ইন্দা চলে ধাওাধাই || ভৈরবী গঙ্গার ঘাটে নাএ করে ভর | দব়্যায় ভাসিল তরী মনে নাঞি ডর || বিশাশয় নাবিক বসিয়া দাঁড় বায় | তরঙ্গে তুরিতে তরী শীতলপুর পায় || শীতলপুর ঘাটে তবে রাখিল তরণী | দক্ষিণ ময়না ধায় দিবস রজনী || নিরঞ্জনের মায়া কহনে নাহি যায় | অনাদ্যমঙ্গল দ্বিজ রূপরাম গায় || . ****************** . অঘোরবাদল পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |