রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
ডানি পাশ নাড়িতে পঞ্চম শেল ফাটে | বাম পাশ নাড়িতে করাতে মাংস কাটে || কুন্তল বান্ধিল চালে রেশমের দড়ি | বদন উপরে দিল গরলের বড়ি || লাউসেন উপরে পড়িল মন্বন্তর | মাথে হাথ দিয়া কান্দে কর্পূর পাতর || কোন পথে কি বলিয়া যাব নিজ ঘরে | দারুণ বন্ধন ঘোরে দাদা পাছে মরে || লাউসেন বলে শুন কর্পূর পাতর | বারতা বলিতে চল ময়না নগর || জননীকে বলিব সকল বিবরণ | পশ্চিম উদয় চায় গোউড় রাজন || নিদারুণ বন্ধনে আমার প্রাণ যায় | সমাচার দেহ গিয়া অভাগিনী মায় || অবোধ ভূপতি পাত্র কিছু নাঞি বুঝে | মামার বচনে মাস্বা পশ্চিমউদয় খুঁজে || পশ্চিমউদয় দিতে যাব পশ্চিম অবনী | জন্মদাতা তুল বন্দী রহিব জননী || এত শুনি কর্পূর কান্দিয়া অচেতন | চলিল ময়না দেশ নাহি দেখে গন || নফর চাকর কত চলিল সংহতি | দিবস রজনী ধায় ময়না বসতী || ধর্মের চরণে সদা নিবেশিত মন | দ্বিজ রূপরাম গান ধর্মের কীর্তন || অবধানে শুন লোক ধর্মের মঙ্গল | শ্রবণে কলুষ নাশ বাঞ্ছা নিরমল || অবিলম্বে পাল্য রাজ্য ময়না ভুবন | জোড়হাথে জননী সমুখে নিবেদন || লাউসেন বন্দী হৈল গোউড় আলয় | বাদল ভাঙ্গিতে বলে পশ্চিম উদয় || অবিলম্বে চল রাজ্য গোউড় ভুবন | ব্যাকুল হয়্যাছে দাদা বিপাক বন্ধন || তুমি যদি থাক রাজ-কারাগারে | তবে নিদারুণ মাস্বা পারে ছাড়িবারে || রঞ্জাবতী মনে করে পড়িল বজ্জর | কল্যাণী মাণিকী কান্দে ধূলায় ধূসর || চারি পাটরাণী কান্দ্যা হইল আকুল | বুড়া রাজা কর্ণসেন নাঞি বান্ধে চুল || আকুল হইয়া কান্দে ময়নার লোক | পুত্র মৈলে যেমন জননী পায় শোক || রঞ্জাবতী বলে রাজা গৌড় চল যাই | ময়না নগরে আর কার মুখ চাই || কালু ডোমে ডাকিয়া আনিল রঞ্জাবতী | হাথে হাথে রাজ্য সঁপে এ চারি রাউতি || কথায় বিলম্ব নাঞি সহে তার প্রাণে | সত্বর বিদায় মাগে পুত্রবধূ স্থানে || চারি পাটরাণী শুন আমার বচন | বন্দীঘরে বত্সর দিবস বিলম্বন || সবিশেষ বিদায় কানড়া বিদ্যমান | রাজভেট লইয়া গোউড় রাজ্যে যান || কারাগারে বঞ্চিব আপনি চল রাজা | এহার কারণে আমি দিনু ধর্মপূজা || এত শুনি যাত্রা করে কর্ণ সেন রায় | সমুখে বেহারা ছিল পালকি যোগায় || চতুর্দোলে বসিয়া আপনি চন্দ্রমুখী | সংহতি চলিল মাসী কল্যাণী মাণিকী || অপরঞ্চ গোড়াইল নফর চাকর | আপনি চলিল পুন কর্পূর পাতর || শুভক্ষণে যাত্রা কৈল গোউড় ভুবন | পার হৈল কালিনী পদুমা দরশন || ধর্মপদ কোকনদ করিয়া ভাবনা | দ্বিজ রূপরাম গীত করিল রচনা || পার হৈল ভৈরবী গোউড় দেশ পায় | দেখা দিল কর্ণসেন রাজার সভায় || নরপতি সম্ভাষ করিল নানা ধনে | কান্দিয়া ধরিল রঞ্জা রাজার চরণে || শালে ভর দিতে দুঃখ পাইনু বিস্তর | পশ্চিমউদয় বিপরীত অবনী ভিতর || পাত্রের চরণে ধরি মাগে পরিহার | বিপদ-সাগর ঘোরে তুমি কর্ণধার || ধন দিয়া বিনয় বচন অতিশয় | তবু রাজা পাত্র তারে না হৈল সদয় || গৌড়-কারাগারে রঞ্জা দিল দরশন | বিপাক বন্ধন দেখি হৈল অচেতন || কখন গোউড় আইলে খায়্যা মোর মাথা | পশ্চিমউদয় দিব সেই কেমন দেবতা || পুত্রের বন্ধন নিল আপনার পায় | একে একে সকল বন্ধন নিল গায় || আপনার বন্ধন মায়ের পায়ে দিল | লাউসেন বন্দীঘরে কান্দিতে লাগিল || পশ্চিম উদয় দিতে অস্তগিরি যাই | কি দিয়া মানাব ধর্ম উপদেশ চাই || তুমি মানাইলে ধর্ম চাঁপাইর বনে | গরুড়বাহন রূপ দেখিলে নয়নে || পুত্রের বচন শুনি রঞ্জাবতী কয় | কাহার শকতি বাপু পশ্চিম উদয় || বীর সখা আছে তোর অন্ডির পাখর | কি করিতে পারে রাজা দশ পুরন্দর || লাউসেন শুনি এত কান্দিয়া বিকল | সম্বরিতে নারে রাজা লোচনের জল || বলিতে বলিতে দুই চক্ষে বহে ধারা | ঘরে কেন লুকাইব যুবতীর পারা || বিরাট সদনে যেন আছিলা অর্জুন | পরাধীন হয়্যা যেন রহিল অরুণ || অনুভব করিলে হেথায় সব পাই | তুমি আজ্ঞা দিলে আমি উদয় দিতে যাই || লুকাইয়া সদনে থাকিলে অন্যমত | হাকন্ড ভুবন যাব তরণীর পথ || সূর্যবমশে অবতার ভগীরত রায় | রত্নমালা পুরাণে মহিমা যার গায় || এ তিন পুরুষ মৈল গঙ্গা আরাধনে | তবু নাহি উদ্ধার হইল পিতৃগণে || দুর্বাসার বরে ভগীরথ অবতার | বিধবার পুত্র হইল বিদিত সংসার || . ****************** . অঘোরবাদল পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |