রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
পড়িল কোটাল রণে অবশেষ নাই | কন্ধে মুন্ডে রুধিরে ভাসিল কত ঠাঁই || কালুর বিক্রম দেখি পালায় কোটাল | সিংহের সমীপে যেন সারঙ্গ শৃগাল || কাঙুরের কোটাল সমরে দিল ভঙ্গ | দ্বিজ রূপরাম গান বিধাতার রঙ্গ || সমর জিনিল বীর কালু ধনুর্ধর | কোটাল পালায়্যা গেল কাঙুর ভিতর || নিজ সেনা সমরে পড়িল সর্বজন | ধাইল পবন বেগে বিপাক গহন || সভা করি কাঙুরে বস্যাছে কর্পূরধল | কোটাল কান্দিয়া বলে তরাসে বিকল || রক্ষা নাহি কাঙুরে অনর্থ বড় হৈল | কালুসিংহের সমরে অনেক সেনা মৈল || আচম্বিতে হানা দিল নাঞি বোলচাল | মঘবান ঐরি যেন বিক্রম বিশাল || পড়িল সকল ঢালী বন্দুকী ধানুকী | অপরঞ্চ জিবার বাসনা নাঞি দেখি || দিগম্বর মনে করে তেজিব কাঙুর | কালরূপে দেখা দিল কেমন অসুর || একেশ্বর দেখিলু দোসর কেহ নাই | কুঞ্জর সমুখে যেন সিংহের বড়াই || দুই দন্ডে কাটিল সকল দলবল | পার হয়্যা আসিয়াছে গন্ডকীর জল || এত শুনি কর্পূরধল কোপে কম্পমান | বদন শসীর বর্ণ অরূণ নয়ান || সাজ সাজ আপনি বলিছে ঘনে ঘন | দুরদুর দামা বাজে গোলার নিঃস্বন || ডিগি ডিগি শবদে কাড়ায় দিল কাঠি | টলবল করে রাজা কাঙুরের মাটি || আপনি কর্পূরধল সাজ সাজ ডাকে | সভাই হেত্যার বান্ধে কেহ নাই থাকে || চৌদিগে সত্বর সাজে রাজার দলবল | সৈয়দ কোমর বান্ধে পাঠান মোগল || কাল ভেরিকাল বাজে দগড় দাদুড় | পঞ্চপাত্র আগে সাজে চঞ্চল কাঙুর || কেহ-বা ঘোড়ার পিঠে কেহ-বা কুঞ্জরে | ইন্দ্র আদি দেবতা কাঁপিল সব ডরে || রাজার ভাগিনা সাজে মানসিংহ রায় | পঞ্চাশ হাজার ঘোড়া আগু পাছু ধায় || নানাবর্ণ সিফাই যুবক আর জরা | সুবর্ণ পাগড়ি শিরে সলম্বিত ডোরা || দুহাথে হেত্যার ধরে আর বাগডোর | সৈন্ধব পাথর পারা সিংহ হৈতে জোর || বীর কালু বলিয়া তর্জন করে রাণা | হেত্যার বান্ধিয়া উঠে রণে দিতে হানা || কত ঠাঞি শিঙ্গা পড়ে কত ঠাঞি কাড়া | কত ঠাঞি সাজন করিছে হাথি ঘোড়া || সর্দার সিফাই সাজে সতন্তর সেনা | জাঙ্গড়া সৈয়দ সেখ আগুলিল থানা || জয়সিংহ সাজিল উত্তর প্রতীহার | বাহাত্তর কাহন সংহতি তীরন্দার || কামানী কামান সারে শিলিদার শিলি | নৈ কাহন দেখা দিল রায়বেশে ঢালী || খানসামা সঙ্গে সাজে খালেজাদ ভায়া | হাজার ধানুকী সঙ্গে পাগে রামটায়া || ঝাঁকিমল্ল সাজে কর্পূরধলের শ্বশুর | নামজাদা ভূঞা সেই নিবাস লাহুর || ক্ষেম খায় কাঙুরে রাজাকে ধরে ছাতি | যাহার সংহতি সৈন্য হাজার পদাতি || তিনবার হানা দিল এগার সিন্ধুর | দশ হাজার ঘোড়া সঙ্গে টাঙ্গ বান্ধা ক্ষুর || রণজয় কোটাল সাজিল সতন্তর | রণসিংহ মিঞা সাজে যমের দোসর || কুঞ্জরের গলায় সুবর্ণ গন্টা বাজে | অশ্বপৃষ্ঠে রাউত পতঙ্গ যেন সাজে || অনুহিতমান রবি বিষম প্রলয় | দশদিগ হাথি ঘোড়া একাকারময় || সাজ সাজ বলি ডাকে রাজা কর্পূরধল | দ্বিজ রূপরাম গান শ্রীধর্মমঙ্গল || দুরদুর শব্দ ঘোর চৌষট্টি বাজনা | কালুর উপরে সাজে সাত লক্ষ সেনা || হুড়হুড় শবদ সঘনে গোলা পড়ে | ফণিমণি উপরে ধরণীখাল নড়ে || অষ্ট কুলাচল কাঁপে সমুদ্রের জল | আনে বলে বসুমতী যায় রসাতল || অনুহিত চারিদিগে ঘোড়ার দাবড়ি | কুঞ্জর চরণে মহী-সররুহে ডেড়ি || দামামার শবদ অনেক দূরে যায় | . ****************** . কলিঙ্গবিভা পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |