রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
অন্তরে সাহস হল্যে রণে বনে জয় | সাহস করিলে লক্ষ্মী ঘরে বসি পায় || এত বলি সাহস করি বলে দুর্গানাম | ভবানিরামের বলে ভকতের সম || (? ) পার হয়্যা ভৈরবী গৌড়েতে দরশন | কুকুরের রক্ত নিয়া ভাবে মনে মন || ভুমেতে ঢালিয়া দিল খই চিড়া মুড়ি | চারিদিগে কুকুর ধাইল রড়ারড়ি || চিড়া খেত্যা খেত্যা কুকুর খাত্তাখাই করে | কাটারি হানিল সিন্ধা তাহার উপরে || রুধির ধরিল তার ধরিআ [ ত ] শরা | কোটাল কুটিল বুদ্ধি কিছু নাহে হারা || বাম করে রক্ত শরা নিল প্রাণপণে | দড়বড়ি রাজার দরবারে দরশনে || রক্ত শরা দিলের রাজার বরাবর | চোর বলে মাথায় জুড়িয়া দিই কর || লাউসেনের রক্ত লইআ আনিল যতনে | ছয় দিবসে শিশু মরে গেল গনে || দুগ্ধ বিনে পথে মৈল পাত্রের ভাগিনা | লাউসেন মরিল বলিতে শ্রবণে পাইল সোনা || জোড়া পাইল কাবাই তুরঙ্গ খাঁড়া ঢাল | বক্সিস পাইল নিন্দা হইল নেহাল || বিদায় হল্য বাড়কে যতেক চোরগণ | লাউসেনের রক্ত দেখে যত সভাজন || বার ভুঞে বসিল অধরে দিআ হাত | পাত্র মহামদ বলে রাজার সাক্ষাৎ || এই রক্তে ভূপতি এখনি কর স্নান | অমর হইবে তুমি ইন্দ্রের সমান || বলিতে বলিতে বড় মনে হৈল ত্বরা | ভূপতির মাথায় ঢালিল রক্ত শরা || জামা জোড়া অঙ্গে রক্ত পড়িল তখন | পূর্ণিমার চন্দ্রে যেন লাগিল গ্রহণ || পবিত্র পাতকপূর্ণ পাপ রক্তে স্নান | শব্দ করে খলখল কুকুর সমান || কুকুর-আকার মুখ পিঙ্গল লোচন | পাতক প্রতাপপূর্ণ গেল পূর্ব্ব ধন || বড়ই চঞ্চল হৈল উঠে আর আর বৈসে | রাম শব্দ বলিতে কুকুর-ভাষা আইসে || পাগল হইল রাজা পর শব্দ শুনি | আকস্মাৎ টলবল করে গৌড়ের ধরণী || কেহ [ বলে ] কি জানি হইল কোন রূপ | সঙ্গদোষে নষ্ট হইল গোউড়ের ভূপ || অর্থদান করে রাজা বসন ভূষণ | মহাভারতের বাক্য শুনে রামায়ণ || পূর্ব্বের প্রতাপে দূরে পাতক সকল | পবিত্র হইল রাজা যেন গঙ্গাজল || রামস্বর হইল বেরাইল অন্য কথা | কলিযুগে গৌড়েশ্বর যেন কর্ণদাতা || রাজভূষা বিস্তর সন্তোষ হইল মতি | জয়মুনি ভারথ শুনে রামায়ণ পুথি || প্রহ্লাদ সদৃশ যেন ছিল চন্দ্রহাস | বলবন্ত রিপু তার করিতে বিনাশ || চন্দ্রহাস বিষ দিতে লিখিল রাজন | বিষ অর্ঘ্যদান লয়্যা দিলেক মদন || পাটে বস্যে কৃষ্ণকথা শুনে গৌড়েশ্বর | ময়না লইআ কিছু শুনহ উত্তর || ময়নার লোক কান্দে হায় হায় করে | লাউসেন চুরি গেছে নৃপতির ঘরে || ধর্ম্মের প্র[ভাব] হেতু বিধাতার খেলা | ঘুমায় আলিসে লোক দশদন্ড বেলা || বৈকুন্ঠেতে লাউসেন কেহ নাই জানে | রঞ্জাবতী লাউসেন না দেখে নআনে || পরাণে বিকল বড় হৈল রঞ্জাবতী | দাসীরে বিনয়ে বলে করিআ প্রণতি || কল্যাণী মানিকী শুন আমার বচন | কোনখানে রাখিআছ মোর প্রাণধন || পরাণে বিকল বলে কল্যাণী মানিকী | কোলে তোমার লাউসেন সকালেতে দেখি || আছাড় খাইআ পড়ে রঞ্জাবতী রাণী | বদনে ঐমনি কেহ দেয় গঙ্গার পানি || বুকে হানে দু-হাত উরাতে মারে ঘা | ধুলায় ধূসর তনু মুখে নাই রা || ধর্ম্মের মায়া কিছু কহা নাই যায় | রূপরাম ফকির ধর্ম্মের গীত গায় || নানা অমঙ্গল হৈল ভূপতি মহলে | কোথা গেল কিবা হল্য সর্ব্বলোক বলে || কেহ বলে চোরে নিল কেহ বলে বাঘে | কেহ বলে একথা শুনিতে ভয় লাগে || কেহ বলে বায় পিচাশে পারা নিল | ময়নার লোক যত কান্দিতে লাগিল || চৌদিকে চাকর দৌড়ে ঘাটি ঘাটি থানা | টলমল করে মহী দক্ষিণ ময়না || ময়নার লোক কান্দে অঝের নআনে | রায় কর্ণসেন কান্দে হইয়া অজ্ঞানে || . লাউসেন-চুরি পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . এই পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |