রূপরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য |
রূপরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূচি |
মার্জার সমান গণি হাথি মাণিকরাজ | এহারে বধিলে আমি পাব বড় লাজ || যদি আজ্ঞা আপনি করেন গৌড়েশ্বর | পাটহস্তী এখনি পাঠাই যমঘর || মালসাট মারিয়া দরবার হৈতে উঠে | পরাক্রম দেখিয়া রিপুর বল টুটে || বাক্য শুনি সকলে লাগিল চমত্কার | শিশুকে যুঝাবে হাথি বড় অবিচার || দরবার বসিয়া কেহ কানাকানি করে | বিধাতা হইল বাম বৈদেশী কুঙরে || পাত্র বলে এখন মনেতে জন্মে সুখ | ধর্মকথা ভাবিয়া সভার মনে দুখ || যারে দেখি হারিল বনের বাঘটি | সেই মহাবীরকে এমন কার্য কি || এত শুনি মাহুত ডাকিল পুনর্বার | গদা মাহুত ছিল তথা করিল জোহার || পাত্র বলে মাহুত শুনহ মন দিয়া | মাণিকরাজ হস্তী আন সাজন করিয়া || বিলম্ব না সহে গজ আনহ তুরিত | ভাগিনা লড়িব আজি তাহার সহিত || এত বলি মাহুতে বাহিরে কথা কয় | লাউসেনের মৃত্যু যেন এইবারে হয় || অবশ্য তোমারে গদা করিব নেহাল | তুরিত আনহ হস্তী করিয়া মাতাল || বিশাশয় ঘড়া মদ শুঁড়িঘরে লবে | উদর পুরিয়া তাহা কুঞ্জরে খাওাবে || অজ্ঞান হইলে শীঘ্র হেলাইবে গায় | একবার চাঠিলে পাতাল যেন যায় || ভাগিনা হইলে বধ কানে সোনা দিব | সভা হৈতে মর্যাদা মাহিনা বাড়াইব || এত শুনি গদা মাহুত উঠাইল পান | পাটহস্তী লয়্যা তবে শুঁড়িঘর যান || হাথে ধরি অঙ্কুশ হস্তীর কান্ধে বৈসে | দরশনে পথিক পালায় বামপাশে || গজঘন্টা গলায় সুন্দর শব্দ শুনি | চরণে চরণে যায় চঞ্চল অবনী || দূরে হৈতে দেখে হস্তী হিমালয় আভা | যুগল জঠর পাশ পুখুরের গাবা || কুলাপ্রায় দুটি কান চায় ঘনে ঘন | শুঁড়িঘরে গিয়া শীঘ্র দিল দরশন || হস্তী লয়্যা মাহুত শুঁড়ির নাছে রয় | বামহাথে অঙ্কুশ ডাকিয়া কথা কয় || নিজালয় আছ ভাই রামদাস শুঁড়ি | রাজপাত্রের বড়ই হইল দড়বড়ি || ভাল মদ বাছ্যা দিবে বিশাশয় ঘড়া | মাতুল ভাগিনা বড় বাজিল ঝকড়া || লাউসেন আস্যাছে ময়নার তপোধন | এ সব অনর্থ তার বধের কারণ || আপনি পাঠায়্যা দিল পাত্র মহামদ | ব্যালিশ মোহর এই দিয়াছে নগদ || হেম লয়্যা মাহুত দিলেক হাথে হাথে | অবিলম্বে মদ আন হস্তীর সাক্ষাতে || একতিল এখানে বিলম্ব নাহি সয় | জ্বলন্ত মদের ঘড়া শুঁড়ি সব বয় || হাত বাড়াইয়া রাখে হস্তীর সমুখে | শুন্ড বাড়াইয়া খায সরস চুমুকে || বিশাশয় ঘড়া মদ করিল ভক্ষণ | আর মদ খাইলে হইব অচেতন || মনোজ বিহারে বড় মাতিল কুঞ্জর | নিঃশ্বাসে উড়িয়া গেল শুঁড়ির পাটঘর || হুদুরা প্রাচীর ভাঙ্গি করে খান খান | অঘোর চঞ্চল তবু বিশেষে অজ্ঞান || আনচান পাথরে বসায় হাথি দাঁত | দেহারা দেউল ভাঙ্গে প্রাচীরের কাঁথ || আপনা পাসরে হস্তী হইয়া মাতাল | ইত্যাদি লোকের বাড়ে বিষম জঞ্জাল || আছাড়িয়া মারে আর কুরঙ্গ মানুষ | অধীর হইল হস্তী না মানে অঙ্কুশ || মাহুত বসিয়া কান্ধে শঙ্কা নাই মনে | চলিতে ফিরিতে হস্তী ঘুব়্যা যায় গনে || শুন্ড তুলি ঘুরে যেন কুমারের চাক | সিংহের সমান ডাকে বিপর্যয় ডাক || গুঞ্জার বরণ আঁখি ধিকিধিকি জ্বলে | দিনান্তরে উল্কাপাত যেমনে খসিলে || কান্দে গদা মাহুত রাখিতে নারে হাথি | শুন্ডের কাছাড় মারে অন্তরীক্ষ গতি || দোসারি দোকান ভাঙ্গে আর কোঠাঘর | চমকিত দরবারে আপনি গৌড়েশ্বর || দিগে দিগে দুর্দুর পড়িল ধাওাধাই | রাজ্যের রক্ষণে রাজা দিলেক সিফাই || বড় বড় ঘর পাএ চুরমার করে | শিমুল বকুল তায় ফেলএ অম্বরে || মাহুতে মারিতে চায় শুন্ডের কাছাড়ে | প্রাণ লয়্যা মাহুত লুকায় আড়ে-ওড়ে || দুই আঁখি মুদিত মাতাল হয়্যা বুলে | শিন্ডে ধরি ঐমনি পাথর ঘর তুলে || ঐমনি গগনে ফেলে দশবিশ হাত | তায় অজা আর কত মনুষ্য নিপাত || ভয় পায়্যা সংসার উঠএ বড় গাছে | নৌতন নটুয়া পারা পাটহস্তী নাছে || অন্তরীক্ষে উত্তরিল রাজার সভায় | বস্যাছিল বারভূঞা উঠিয়া দান্ডায় || রাজা বলে মাহুত সামাল দেহ ভাই | পাত্র বলে রিপুর বদনে লাগে হাই || সভাসদ সজ্জনের মুখে নাই রা | মুখ চায়্যা কান্দে গদা মাহুতের মা || তৃষ্ণায় আকুল গদা জল চায় খাত্যে | কোন বীর হস্তীর সমুখে নারে যাত্যে || মহাপাত্র আপনি বলিছে ডাক দিয়া | লাউসেন ভাগিনা কোথা আইস আগু হয়্যা || সভে বলে লাউসেন সূর্যের ভকিতা | মাতঙ্গ বধিতে আজি দেখিব যোগ্যতা || পাটহস্তী বধিলে বকশিস্ দিব ঘোড়া | ময়না পামরি দিব কলধৌত জোড়া || . ****************** . হস্তিবধ পালার পরের পৃষ্ঠায় . . . . পাতার উপরে . . . মিলনসাগর |